আবারও হামলার শিকার মুক্তিযোদ্ধা নিখিল কুমার সিকদারের পরিবার। এমনকি তাঁর মেয়ে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মী শিউলী সিকদারকেও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ডাকাতি, হামলা ও জ্বালাও পোড়াও নিয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা খবর প্রচার করলে অচিরেই তাকে গুম করা হবে। ইতোমধ্যে নিখিল কুমার সিকদারের বিধবা স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বসত ঘরে আগুন লাগিয়ে তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের মাগুরা জেলা সদরের নতুন বাজার এলাকার প্রত্থিতযশা পরিবার নিখিল কুমার সিকদার। যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক ও পেশাগত জীবনে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রী দূর্গা রানী সিকদার পুরান বাজার এলাকার বাড়িতে একাই থাকতেন। মাঝেমধ্যে নি:সঙ্গ মাকে দেখতে রাজধানী ঢাকা থেকে তাঁর ছেলে ও মেয়ে যেতেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে হামলার শিকার হলো পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারটি।
ঘটনার পর থেকে অন্য প্রতিবেশীরাও বিশেষ করে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় যারপরনাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ঘটনা জানিয়ে শিউলী সিকদার মাগুরা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে সন্ত্রাসীদের সাথে মীমাংসা করতে বলে পুলিশ। উল্লেখ্য,থানার অস্ত্র লুট ও মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে অফিসার ইনচার্জ থানায় অনুপস্থিত। যদিও টেলিফোনে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চিহ্নিত ঐসব সন্ত্রাসী এতোটাই শক্তিশালী ও বেপরোয়া যে-পুলিশও তাদের ভয় পায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার ঘটনার সময় উপস্থিত শিউলী শিকদারকে বেধরক মারধোর করে প্রতিবেশীদেরকেও এলাকা ছাড়ার কথা বলে সন্ত্রাসীরা। উল্লেখ্য, শিউলী সিকদার বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টিভির সিনিয়র ভিডিও এডিটর ও অপর একটি পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার। তাকে এলাকা ছাড়া করলে অন্যরাও ভয় পেয়ে যাবে বলে তাকে হত্যারও হুমকি দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার আগের রাতে ঢাকা থেকে অসুস্থ মাকে দেখতে ঢাকা থেকে মাগুরা যান গণমাধ্যমকর্মী শিউলী সিকদার। বুধবার একদল দুর্বৃত্ত হঠাৎ করেই তাদের উঠোনে জড়ো হয়ে বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে। এ সময় বাড়িঘর ছেড়ে তাদেরকে চলে যেতে হুকুম করলে শিউলী সিকদার প্রতিবাদ করে তখন তার ওপর চড়াও হয় বেশ ক’জন। অতপর হাশেম, রিয়াজ, হারুন, মোহাদ্দিস ও রজব আলীর নেতৃত্বে অন্যরা বাড়িঘর ভাংচুর করে সোনাদানা, টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় পাড়ার লোকজন বাধা দিতে এলে তাদেরকেও ধাওয়া দেয় সন্ত্রাসীরা।
ঘটনার পর থেকে সিকদার পরিবারের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। গেল দেড় মাসে পরিবারটির ওপর তিনবার হামলা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটলো। এমনকি শিউলী সিকদার এই দিয়ে দু’বার হামলার শিকার হলেন। জীবনের ভয়ে তিনি যেমন মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না তেমনি কারও কাছে বিচার দিতেও ভয় পাচ্ছেন। পরে তার বিধবা মাকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে কি না এই ভেবে। আবার সন্ত্রাসীদের একের পর এক হুমকির কারণে থানাও কোন ব্যবেস্থা নিচ্ছে না। সব মিলে দু:সহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও মেয়ে।