বুধবার,

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

|

অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু শনিবার উজানের দেশগুলোর কাছে বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য চাওয়া হবে : পানি সম্পদ উপদেষ্টা নোয়াখালীতে পানি কমছে, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টে রিট দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ শেখ হাসিনা মেনন ইনুসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হত্যাকান্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিচার হবে নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না : প্রধানমন্ত্রী সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ আদালতের হবিগঞ্জের কার ও ট্রাকের সংঘর্ষে নারীসহ নিহত ৫ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

ঢাকা শহরের কুকুর কথা 

ডা. মুজিব রহমান

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকা শহরের কুকুর কথা 

সভ্যতার আদিকাল থেকে মানুষের বিশ্বস্থ বন্ধু কুকুর। কুকুরই মানুষের প্রথম পোষা প্রাণি। কুকুর-মানুষ বৈরীতা শুধুমাত্র ঢাকা শহরের একক সমস্যা নয়। এটি আমাদের দেশের যুগযুগকার রূঢ বাস্তবতা। আমাদের সামাজিকীকরণে প্রাণি হিসেবে কুকুরকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এক সময় ঢাকা মহানগর কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে সাঁড়াশি দিয়ে কুকুর হত্যা করতো। এই চর্চা ঢাকা কিংবা অন্যান্য দেশের শহরেও ছিলো। প্রকাশিত গবেষণা মতে, ২০০৩-০৮ সালে ঢাকা শহরে প্রতিবছরে গড়ে ২২,৪১৫টি কুকুর গণহত্যার ঘটনা ঘটতো। ২০১৫ সালের গবেষণায় দেখা যায় ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমটারে ৫২টি কুকুর ছিলো এবং প্রতি ৮২৮ জন মানুষের বিপরীতে ১টি কুকুর। যুগের আধুনিকায়নে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে কুকুর মেরে ফেললে তাদের সংখ্যা না কমে বেড়ে যায়। ফলে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তাদের সাথে মানুষের ইতিবাচক আচরণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন সহযোগী খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র সহযোগিতায় রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পরিচালিত ২০২২ সালের গবেষণা মতে ঢাকা শহরে মোট কুকুর সংখ্যা ৭৩ হাজার ৭৭৮ (৬৮,০৭৬-৮০,৫৩৪, ৯৫% CI)। এই হিসাবে এ শহরের প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ১৭টি কুকুর আছে এবং বন্ধ্যাকৃত কুকুরের সংখ্যা ২৬%। ইতোমধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকা শহরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী তিন রাউন্ড কুকুর টিকার কাজ সম্পাদিত হয়েছে। 

অত্যধিক কুকুর সংখ্যা ব্যবস্থাপনার টেকসই যুগোপযুগী কর্মকৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের উন্নয়ন সহযোগী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপারেশনাল প্ল্যান জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির অধীনে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে কুকুর জরিপ (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ২০২৩) পরিচালনা করা হয়। জরিপে পাওয়া তথ্য লিংকন-পেটারসন-চ্যাপম্যান এস্টিমেটর ইনডেক্স অবলম্বনে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেন্টমার্টিনে মোট কুকুর সংখ্যা ১১৪৪ (১০৯৩-১১৯৪; ৯৫% CI)। এখানকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে কুকুর সংখ্যা ৩৪৯ এবং প্রতি দশ জন মানুষের বিপরীতে ১টি কুকুর। বৈজ্ঞানিক গড়পড়তায় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতি একশো জন মানুষের বিপরীতে একটি কুকুর থাকাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। এখনকার সময়ে দেশের যে কোন নগর, মফস্বল, গ্রামের মোট আয়তন ও জনসংখ্যার বিপরীতে সর্বোচ্চ কুকুর ঘনত্ব সেন্টমার্টিনে। কাজেই জনঘনত্ব ও আয়তন উভয় বিবেচনায় প্রবাল দ্বীপে কুকুরের মোট সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত, চরম অস্বাভাবিক।


এক যুগ পরিক্রমায় বাংলাদেশের জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি কতোটা কার্যকর, তা জানার জন্য প্রাণিকামড়ে আক্রান্ত রোগীর ইমিউনাইজেশন রেকর্ড বুক এবং ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদানের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে টাইম সিরিজ গবেষণা করা হয়েছে। ‘দ্য ল্যানসেট রিজিয়নাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়া’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণামতে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার এলাকায় গড় কুকুর ঘনত্ব ১২.৮৩ এবং মোট পথকুকুর সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ; মানুষ ও কুকুরের অনুপাত ৮৬.৭ অর্থাৎ প্রত্যেকটি কুকুরের বিপরীতে জনসংখ্যা প্রায় ৮৭ জন এবং ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রমে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় গড়ে প্রায় ২১, ২৯৫টি কুকুর টিকাপ্রাপ্ত হয়। জীনতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দেশের জলাতঙ্ক ভাইরাস আর্কটিক ১ গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত। 

'প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯' এর কুকুর নিধন, অপসারণ, অঙ্গহানি, বিষপ্রয়োগ, আটকে রাখা, অন্যায় অত্যাচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কুকুরের প্রতি মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সহিংস আচরণ কমাতে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নাই। এজন্য ওয়ান হেলথ পন্থায় দ্রুত সময়ে মানবিক কুকুর সংখ্যা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতীয় গাইডলাইন প্রণয়ণ, প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ গঠন এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ প্রাণিকল্যাণ কমিশন গঠন করতে হবে। অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমন্বিত জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 


(ডা. মুজিব রহমান ডিভিএম, এমএস (মেডিসিন), রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (জুনোটিক), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর)
+8801742441139 | [email protected]