চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭৫তম বর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে ১৯৪৮ সালের এ দিনেই গৃহীত হয় এই ঘোষণা। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ ঘোষণার যাত্রা শুরু, বর্তমানে তা নজিরবিহীন হুমকির মুখে।
হিংসা-বিদ্বেষ ও স্বার্থপরতায় বিশ্ব যেন উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। তাই দেশে দেশে এবং মানুষে মানুষে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি ও যুদ্ধ- বিগ্রহে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছেনা। লঙ্কিত হচ্ছে মানবাধিকার। মানুষের জন্য যা ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক তাই করা হচ্ছে অবাধে। অনেকে বুঝে শুনেই করছে। কেউ কেউ ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে, মোহগ্রস্ত হয়ে যা খুশি তাই করছে। অপব্যবহার করছে ক্ষমতার। এ কারণে মানব সভ্যতার বিকাশ পথ রুদ্ধ হচ্ছে।
রক্ত করছে প্যালেস্টাইনে। রক্ত ঝরছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ-বিগ্রহে। রক্ত ঝরছে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, কঙ্গো, মিয়ানমার এবং ভারতের কাশ্মীরে। প্রতিদিন মরছে মানুষ, চলছে মৌলিক মানবাধিকার হরণ। ঘরে ঘরে বাড়ছে নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের হৃদয় বিদায়ী কান্না-হাহাকার। এ কান্নার যেন শেষ নেই। গাজায় ইসরাইলি সেনাদের হামলার ঘটনা বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের চোখ থেকে প্রতিনিয়ত ঝরাচ্ছে জল। হামাসের সঙ্গে ইসরাইলিদের লড়াই চলছে গাজায়। সেখানে মরছে মুক্তিকামী মানুষ। বিশেষ করে স্কুল, হাসপাতাল ও বসত বাড়িতে শিশু-কিশোর ও সাধারণ মানুষের ওপর যে বর্বরতা চলছে, নির্যাতন করা হচ্ছে- তানজির বিহীন। গাজায় গত দুই মাসে প্রায় ১৭ হাজার প্যালেস্টাইনিকে ইসরাইলি সেনাদের হামলায় জীবন দিতে হয়েছে। পাঁচদিনের যুদ্ধবিরতি দিয়ে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে। রক্ত করছে নিরীহ প্যালেস্টাইন বাসীর। কোনো অনুরোধ, আহবান মানছেন ইসরাইলিরা। হিংস্রতায় উন্মত্ত এখন তারা।
মানবতাবাদী মানুষ পৃথিবীতে যুদ্ধ চায়না। শান্তিবাদী মানুষ যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে মুক্তি চায় শান্তি প্রত্যাশী মানুষ। কিন্তু কিছু মানুষ যদি মুক্তির পথে না হেঁটে অকারণে যুদ্ধে জড়ায়, অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে- তাহলে বন্ধ হবেনা রক্তপাত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো রক্ত ঝরছে। মানুষ কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন- হিংস্রতায় উন্মত্ত হয়ে। হিংগ্রে দানবের পৈশাচিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে চায় সাধারণ মানুষ।
জাতিসংঘের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানও যেন 'দর্শকে পরিণত হয়েছে"। সংঘাত প্রতিরোধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে ঐতিহাসিক সনদ ম্যাগনাকার্টা, জাতিসংঘ সনদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সব মন্ত্রই। ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে খেলছে ইসরাইল। ধর্ম পালনের অধিকার, ভূমির অধিকার সহ প্রায় সব অধিকারই কেড়ে নিয়েছে। সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়ে জীবন গুলোও কেড়ে নিচ্ছে। সেই শুরু থেকেই এই অনাচার-অবিচারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত কেউ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তেমন কোনো উদ্যোগই নেননি। প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই 'চোখ বন্ধ নীতি' অবলম্বন করেছেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানই প্রথম ইহুদিবাদী রাষ্ট্র হিসেবেই সরাইলকে স্বীকৃতি দেন। ইসরাইলের কাছে নিজেদের আবাস, বাড়িঘর, জীবন-জীবিকা একে একে সব হারালে ও ফিলিস্তিনিদের দিকে ফিরে তাকাননি ট্রুম্যান। বিচারের বদলে নৃশংসতাকে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচারে চলছে অমানবিক নির্যাতন। মিয়ানমার সেনাদের বর্বরতা সভ্যতার ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা, গুম, নারীধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বিষয়টি সাম্প্রতিককালে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এগারো লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের নিজ বাস ভূমে ফিরে যাওয়া এখনো অনিশ্চিত। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশের তৎপরতা সহ বিভিন্ন উদ্যোগ কার্য করে মিয়ানমার সরকারের দীর্ঘ সূত্রতা, অনীহা ও তালবাহানা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারছেনা। রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন তথা তাদের বাস্তুচ্যুত করার পরও মিয়ানমার কোনো ক্ষমা চায়নি। কাশ্মীরেও চলছে অকথ্য নির্যাতন। অগ্রাসন বাদী দখলদারদের হাত থেকে মুক্তি মিলছেনা শান্তিপ্রিয় জনগণের। তাই তারালড়াকু হয়ে উঠছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতে তারাও মরণপণ আজ। এ অবস্থায় মানবিক বিশ্ব ব্যবস্থা জরুরি হয়ো উঠেছে। এ ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই। আমরা মানবিক বিশ্ব চাই।
সারাবিশ্বেই মানবতা ও মানবাধিকার এখন হুমকির মুখে। সবখানেই অধিকার লঙ্ানের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবন ধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। নেই খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অধিকার। পরিকল্পিত ভাবে চালানো হচ্ছে গণহত্যা। নির্বিচারে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে। চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যায় যুদ্ধ। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ। এক কথায়, এক খণ্ড নররূপে হয়ে উঠছে পৃথিবী। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংস লীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। একদিকে মানবতার বুলি আওড়াচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ হত্যার বলি চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে 'মানবতার রক্ষক রাই।
নির্যাতিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে 'বিশ্বমানবতার বিবেক' জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলো। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এখন 'একপ্রস্থ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়'। 'চোখের মাথা খেয়ে' বসে আছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও। সম্প্রতি শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতির এ চিত্র উঠে এসেছে।
মানবতা ও মানবাধিকারের বিচারে বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কয়েকটি দেশে চলছে গণহত্যা আর জাতিগত নিধন যজ্ঞ। মিয়ান মারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও সংঘবদ্ধ বৌদ্ধ অধিবাসীদের অভিযান তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া ও ইয়েমেনে ঝুঁকছে মানবতা। ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষের কবলে লাখ লাখ নাগরিক। কেড়ে নেওয়া হচ্ছো ফলিস্তিনিদের ভূমির অধিকার। একই ভাগ্য বরণ করছে ভারতের কাশ্মীরের অধিবাসীরা। সম্প্রতি এ তালিকায় যোগ হয়েছে চীনের উইঘুরজাতি গোষ্ঠীর নাম। উইঘুরদের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক ভাবে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পাঁয়তারা করছে বেইজিং। বন্দিশিবিরে আটক করা হয়েছে ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে।
গত এক দশকে মধ্যপ্রাচ্যের একটার পর একটা দেশে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অবৈধযুদ্ধ। এসব এ যুদ্ধে মারা গেছে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ। হত্যা, ধ্বংস আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষ। কিন্তু নির্যাতিত ও নিপীড়িত এসব মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর, তারা তেমন কোনো কথা বলছেনা।
এখন প্রশ্ন হলো-মানবাধিকার কী এবং কেন এটা নিয়ে এত আলোচনা? বিশ্বব্যাপী বর্তমানে যে অশান্তি বিরাজ করছে, তা প্রত্যেক মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। অতীতে যখন প্রযুক্তির এত উন্নয়ন হয়নি, তখন যে সহিংসতা হতো, তাৎক্ষণিক সবাইকে ছুতে পারতনা। এমনকি কখনো কখনো তা প্রতিহত এবং পরাজিতও করা যেত। এখন এর বিস্তৃতি বেড়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে অদৃশ্যভাবে এসে আঘাত করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা হয় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর, প্যারিসে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিভীষিকার পরিপ্রেক্ষিতে এর জন্ম। অবশ্য এখানে উল্লেখ করা যায়, বিশ্বের ভয়াবহ যুদ্ধের বেশিরভাগের নেতৃত্ব দেয় ইউরোপ। যেমন-ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার, ফরাসি ও জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তারে হতাহতের সংখ্যা এবং ফাংস এখন ইতিহাস। স্যামুয়েল হান্টিংটন তার 'ক্লাস অব সিভিলাইজেশন' বইতে এর চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে তার একটি মন্তব্য উল্লেখ করা যায়-'পশ্চিম (শক্তি) বিশ্ব জয় করেছে তার মূল্যবোধ বা ধারণা দিয়ে নয় বা ধর্মীয় মূল্যবোধ দিয়ে নয়। তাদের সংঘটিত সহিংসতা দিয়ে তারা তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করেছে।' এ ঘোষণা মানব ইতিহাসের অন্যতম দলিল। এটাকে বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা, সুবিচার ও শাস্তির ভিত্তি ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বের ১৬৫টি দেশ এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করে এর সাথে সম্পৃক্ততা জানায়।
এই ঘোষণার মুখবন্ধ সমগ্র বিষয়কে ধারণ করে আছে। যেমন প্রথম বাক্যটিই 'যেহেতু প্রতীয়মান যে স্বাধীনতা, সুবিচার এবং শান্তি মানুষের জন্মগত অধিকার' আরো ছয়টি আর্টিকেলে প্রতিটি সমস্যা ও বিষয়কে প্রকাশ করা হয়। ৩০টি আর্টিকেলে সমৃদ্ধ এই ঘোষণা স্বাক্ষরকারী ১৬৫ দেশের জন্য অবশ্য কর্তব্য। প্রথম আর্টিকেলে বলা হয়েছে-জন্মগত ভাবে সব মানুষ সমান এবং অধিকারে সমান। যেহেতু তারা যুক্তি ও নীতিবোধের অধিকারী, তাই তারা একে অন্যের সাথে ভ্রাতৃসুলভ ব্যবহার করবে। দ্বিতীয় আর্টিকেলটি একটু বড় তবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বলা হয়েছে-প্রত্যেক মানুষের সব অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থাকবে। কাউকে কোনো অজুহাতে পার্থক্য বা বৈষম্য করার চেষ্টা করবেনা।
এই দ্বিতীয় আর্টিকেলের বক্তব্যকে যদি ধারণ করা হতো, তবে বিশ্বে কোনো সঙ্ঘাতের উদ্ভব হওয়া সম্ভব হতোনা।
তৃতীয় আর্টিকেল সংক্ষিপ্ত কিন্তু আরো ঋজু। বলা হয়েছে- প্রত্যেকের জীবন ধারণ, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার থাকবে। পরের আর্টিকেলে বলা হয়েছে, কেউ ক্রীতদাস থাকবেনা বা দাসত্ব করবেনা এবং ক্রীতদাস প্রথাও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এমনিভাবে প্রতিটি ধারায় মানুষের অধিকার, বিচারের অধিকার সহ সব অধিকার বিধৃত আছে এই ঘোষণাপত্রে। ৭৫ বছরের পুরনো জাতিসজ্যের ঘোষণা কতখানি বাস্তবায়ন হয়েছে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মানবাধিকার বাস্তবায়নে নানা সমস্যাও দেখা যায়। যেমন কোনো ব্যক্তি এই অধিকার আদায় করতে গিয়ে অন্যের ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। অথচ দুইপক্ষই তাদের অধিকারের অধিকারী। আবার কখনো কখনো মানবাধিকার কখনো কিছু সাধারণ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পরে। এমন ঘটনা সারাবিশ্বের নানা দেশে ঘটেছে।
জাতিসঙ্গ দু'টি চুক্তিপত্র (কভেন্যান্ট) গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার সবার জন্য। একটি হলো ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এবং অপরটি ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন ইকোনমিক, সোস্যাল অ্যান্ড কালচারাল রাইটস (আইসিইএসসিআর)। দু'টি চুক্তিপত্র হওয়ার কারণ হলো একটি চুক্তিপত্র হলে এতে পুঁজিবাদী, ফেডারেল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহৃত হতো, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুসারী রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্য ছিলনা। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই দু'টি'কভেন্যান্ট'তাদের দেশের আইনের সাথে সংবিদ্ধ করেনি।
এটা একটা বাস্তবতা যে, বিশ্বের প্রায় সব দেশই এই বিশ্বসংস্থার মানবাধিকার ঘোষণার পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়ন করেনি, বরং তারা এই ঘোষণার বক্তব্য গুলো সংবিধান বা আইনের অন্তর্গত করার সময় কিছু কাটছাঁট করে থাকে। তাই কোনো মানুষই এ ঘোষণায় বর্ণিত দাবিগুলোর পূর্ণ সুযোগসুবিধা ভোগ করেনা।
তবে একটি ভালো দিক হলো প্রায় সব দেশেই এই অধিকারগুলো বাস্তবায়নের জন্য নানা আন্দোলন চালু রয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। অবশ্য এটাও সত্য, তাদের কর্মকান্ড সহজ ও নির্বিঘ্ন হচ্ছেনা।
নির্বাচন মানবাধিকারের অন্যতম পথ। যখন এই পথকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন অবশ্যই বলা যাবে মানবাধিকারকে ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ কে এই অধিকার পাবে এবং কে পাবেনা।
বিশ্বের মানবাধিকারের এই ভড়গুর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যদি তৃতীয় বিশ্বের দিকে দকপাত করা যায়, তবে প্রথমেই যে চিত্র ভেসে উঠবে তা
উদ্বেগজনক। এখানে সব অধিকার শুধু ক্ষমতাবানবা ক্ষমতাসীনদের কব্জায়। অধিকার এবং সে অধিকার যা-ই হোক, তা গুরু
ক্ষমতাবানদের। এর অবস্থিতি এত শক্ত যে, সাধারণ মানুষ সব অন্যায়কে স্বাভাবিক মেনেনিচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, এর কি শেষ নেই? জবাব সহজ, পথিবীতে কেউই অবি নম্বর নয়। সেই প্রবাদ সবারজানা। আজকের রাজা, কালকে ভিখারি। সে ভিখারি কারো সমর্থন বা সহমর্মিতা লাভ করেনা।
এই বক্তব্য অনুসরণ করে, একটি মন্তব্য অবশ্যই করা চলে। মানবাধিকার বাস্তবায়নের সাথে সবার ভাগ্য জড়িত। যারা আজ এর ব্যবহার করে বহত্তর জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করছে, তারা এই একই পথে নীত হয়ে বাধ্য হবে অধিকারের আন্দোলনে যোগদান করতে।
গত শতাব্দীতে দু'টি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সেই দু'টি বিশ্বযুদ্ধ অসংখ্য মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে ধুকে ঝুঁকে মরেছে, ক্ষতি হয়েছে প্রচুর সম্পদের, অনেক জনপদ পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেছে- যার তথ্য-উপাত্ত এখনো উঠে আসছে বিভিন্ন
অনুসন্ধানে। এখনযদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশগুলো যদি সেইযুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে ফাংস হয়ে যাবে এই সুন্দর পৃথিবী। ফাংস হবে মানব সভ্যতা- যা শান্তিকামী মানুষ কখনো আশা করেনা। আমরা মানবসভ্যতার বিকাশ চাই। পৃথিবীর বিনাশ নয়, ফাংস যজ্ঞ নয়- চাই মানবাধিকারের সুরক্ষা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের পাশাপাশি মানবিক বোধের জাগরণ চাই। অশুভ শক্তির পতন চাই। বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্মল পৃথিবী চাই। সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা চাই। মানবিক বিশ্ব চাই সকল প্রজন্মের জন্য।
লেখক: মানবাধি কারকর্মী