'ও জীবনরে, ও জীবন ছাইড়া যাইসনা মোরে। তুই জীবন ছাড়িয়া গেলে, মাইনসে কইবো মরা জীবনরে।' পাঁচশো বছরের পুরনো ওপারের গোয়ালপাড়িয়া অঞ্চলের গান। অর্থ না বোঝার বয়স থেকে শুনে আসছি অপার মুগ্ধতায়।
নানাভাবে, নানা অবয়বে, নানা ভার্সনে। আত্মার সাথে দেহের মায়াময় বন্ধন এবং ছাড়াছাড়ির রহস্য ভাবনাই এ গানের মূলকথা। জীবনকে নিয়ে কতোইনা অভিযোগ আমাদের। অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়েই জীবনকে ঘিরে আবার সারাক্ষণ ব্যস্ততা। সকল উৎসব-আয়োজন আমাদের। ক্ষণিকের এ খেলাঘরকে ঘিরেই সকল প্রস্তুতি, সাজ সাজ রব, আনন্দ কোলাহল। সবই একদিন কর্পুরের মতো হঠাৎ উবে যায় অদৃশ্য মাতাল হাওয়ায়।
তবুও ভোগবাদী-বিলাসী জীবন এসব আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকে। ভোগের ঘাটেই নোঙর করে। সরল জীবনটাকে পোশাকি পথে হাঁটতে শেখায়। ফলে জীবন ভাবনা হয়ে ওঠে কঠিন থেকে কঠিনতর। সংসার এক নিরর্থক মোহের মেলা, মায়ার খেলা। জীবনকে পড়তে পারিনা বলেই জীবন আমাদের ধরা দেয়না। অধরাই রয়ে যায়। আস্ফালন আর দাম্ভিকতাই হয়ে ওঠে জীবনের সারকথা। জীবন-মরণের সীমানা খুবই কাছাকাছি। গা ঘেঁষে তারা পথ চলে। মহাকালের সীমারেখায় জীবনসত্যের ব্যাপ্তি অতি সামান্য। সামান্য বলেই এতো মায়া এতো আদরের এই জীবন।
প্রকৃতির এ অমোঘ বিধান, নির্মম সত্য, চরম বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারিনা বলেই আবার জীবনজুড়ে শোকের মাতম, বিচ্ছেদের হাহাকার, বিরহের গ্লানি। এতোসবের পরেও জীবন সুন্দর, জীবন আনন্দের। জয়তু জীবন।
(শাকির দেওয়ান বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, গীতিকার ও শিল্পী)