তোফাজ্জলের শেষ কথা
সাইমন জাকারিয়া
কথা ছিল এ পৃথিবী পাগলের হবে
কথা ছিল এ পৃথিবী বাউলের হবে
তাই আমি প্রথমেই হারালাম প্রেম
মানে আমার প্রথম এবং একমাত্র মন
এ পৃথিবী এমন কেন? ভালোবাসাকে বিভক্ত করে ক্ষমতা ও অর্থ দিয়ে।
হায় পৃথিবী! তুমি না পাগলের হবে!
তাই বুঝি আমাকে পাগল হবার পথ করে দিলে
কারা আনলো এই পৃথিবীতে আমায়?
আমি হাতড়ে বেড়াই
কোথায় তারা?
মা মা গো এই আশ্বিনে তুমি কোথায়?
বাবা বাবা গো তুমিওবা কোথায়?
ও ভাই, মিয়া ভাই আমার, তুমি?
এদিকে কাশফুলগুলো সাদা হয়ে যাচ্ছে
নদী ভরা ঢেউ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে
বাউলা বাতাসে কোথায়, কবে যেন আকাশে উড়ে যেতে যেতে ঘুড়িদের কান্না শুনেছিলাম
আমি কান্না ভালোবাসি না, বাসি না, হাসতে চাই খুব
কিন্তু কোথায় পাবো নির্মল হাসি?
পথের পাগল কেন যেন হেসে ওঠে আমায় দেখে,
আমি লুটিয়ে পড়ি তাদের পায়ে
এই তো নির্মল হাসি! আর কোথাও পাইনি এমন।
আমি দিওয়ানা হয়ে যাই, কেউ কি জানে আমার নাম?
আমার ক্ষুধা পাই কেন? শুনেছি বৈষম্যহীন হয়ে গেছে দেশ
পাগলে ও বুদ্ধিমানে নাই ভেদাভেদ
তা দেখতে ঢুকেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
জানতাম, আমি জানতাম, পৃথিবীতে এমন একটি দেশ আছে
একমাত্র সে দেশেই সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ভিন্ন পাগল ও কুকুরকে মানুষ এক চোখে দেখে,
দেখলেই ঢিল ছুড়ে মারে, আঘাত করে
নিষ্পাপ কুকুর ও পাগলকে আঘাত করার আনন্দ সে দেশ ছাড়া আর কোনো দেশে আছে কি?
আমি তো পাগল, আমার জ্ঞান বুদ্ধি সব গেছে একে একে, কিছুই নেই অবশিষ্ট, শুধু ক্ষুধা ছাড়া
ওরা আমাকে তাই আঘাত করেও খেতে দিলো
মহাজ্ঞানী ও সরল যিশুর মতো আমি পাগল খেয়ে নিলাম পেট ভরে
আহা তাদের কি আনন্দ হলো ভরা পেটের পাগলকে মেরে মেরে
আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে ওরা মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো
আহা কি মায়া! আহা কি আনন্দ!
ওরা হাতে তালি দিল, ভাবলাম এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম
পাগলের পৃথিবীতে আমি না হয় পাগল হয়েই থাকবো…
কিন্তু হায়! পাগলের ভবিষ্যত পাগল না পায় দেখিতে!
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র সংস্কারকালে আজ কেন আমার এমন হলো-
একদল শিক্ষার্থী আমাকে পাগল জেনেই বুঝি কুকুরের শ্রেণিতে ফেলে উন্মত্ত হয়ে উঠলো
আমি বুদ্ধিমান হলে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াতাম,
কয়েকটি ঘুষিতে ওদের দমিয়ে দিতাম,
লাত্থি দিয়ে ওদের ফেলে দিয়ে নিজেকে নিয়ে ছুটে পালাতাম
আর দৌঁড়ে গিয়ে বাবা-মা-ভাইয়ের কবরের কাছে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলতাম
মা গো, বাবা গো, মিয়া ভাই গো, এই দেখো তোমাগো তোফাজ্জল বেঁচে আছে।
কিন্তু আমি যে পাগল! তাই পারিনি উঠে দাঁড়াতে!
মা গো তোমার তোফাজ্জল পেট ভরে খেয়ে তোমার কাছে চলে এসেছে।
বাবা গো তোমার তোফাজ্জলকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখো
মিয়া ভাই, এই তো তোমার একমাত্র ছোট ভাই এসে গেছি তোমাদের কাছে
এখন মাটির গভীরে আবার আমরা স্নেহ পরিবারে একাকার।
সরল ও পাগল হয়ে আমি পৃথিবীর তলে লুকিয়ে পড়েছি, মানুষের প্রেমহীন পৃথিবীর আমাদের নয় গো, হয়তো কারো নয়।
আহারে পৃথিবী! তোমার বিদ্যালয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু যদি প্রেম শেখানো হতো!
কত ভালোই না হত।
আর আমাকেও এভাবে এই অকালে মৃত মা-বাবা-ভাইয়ের কোলে আশ্রয় নিতে হতো না।