দূরে বহুদূরে
স্বপ্নলোকে উজ্জয়িনীপুরে
খুঁজিতে গেছিনু কবে শিপ্রানদীপারে
মোর পূর্বজনমের প্রথমা প্রিয়ারে।
মুখে তার লোধ্ররেণু, লীলাপদ্ম হাতে,
কর্ণমূলে কুন্দকলি, কুরুবক মাথে,
তনু দেহে রক্তাম্বর নীবিবন্ধে বাঁধা,
চরণে নূপুরখানি বাজে আধা আধা।
বসন্তের দিনে
প্রতিবছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ওয়ার্ল্ড ড্রিম ডে অর্থাৎ স্বপ্ন দিবস। স্বপ্ন দেখেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে মেলা ভার। কারণ স্বপ্ন দেখেন বলেই সেই স্বপ্নপূরণের ইচ্ছেতে মানুষ আজীবন সংগ্রাম করে । বিভিন্ন প্রতিকূলতোর সঙ্গে লড়াই করেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যান। স্বপ্ন দেখা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, কারণ মানুষ স্বপ্নকে কেন্দ্র করে তার জীবন অতিবাহিত করে।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতে, “স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না”
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে শিল্প-সাহিত্য, জনশ্রুতি থেকে জ্যোতিষশাস্ত্র সব জায়গাতেই স্বপ্নের কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। মানুষ ঘুমিয়ে হোক বা জেগে হোক স্বপ্ন দেখে। মানুষ যখন তার ভাবনা জগতে প্রবেশ করে, তখন তার কল্পনা জগতে সে ভাবতে ভালোবাসে। এ জাতীয় ভাবনাও এক ধরনের স্বপ্ন। কারণ মানুষ তার কল্পনায় কখনো রাজা, কখনো প্রেমিক, কখনো পৃথিবীর সেরা ধনী, কখনো তার ভাবনাই, তিনিই এই জগতের সেরা বীর। তবে মানুষের অবস্থান ও শ্রেণী ভেদে এই ভাবনা ভিন্ন ধরনের হয়।
প্রথম ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওজিওমা এগুয়াওয়ানওয়ের উদ্যোগে দিবসটির যাত্রা শুরু হয়। যদিও অধ্যাপক ওজিওমা এগুয়াওয়ানওয়ে বলেন, ‘স্বপ্ন দিবস কিন্তু ঘুমিয়ে কাটাবেন না, বরং এই দিবসকে কাজে লাগান আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য।’
একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগানো এবং স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দেয়া, মূলত যারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পান।
পৃথিবী সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি হয়েছে স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীতে যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে, তা কারো না কারো স্বপ্নের বাস্তব রূপ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন থেকে। পৃথিবীর অনেক কবি-সাহিত্যিক তাদের বই বা গান রচনা করেছেন, তার কল্পিত ভাবনা বা স্বপ্ন থেকে। মানুষের যত কল্পনা বা চিন্তা , তার মাত্র কয়েক পার্সেন্ট মানুষ অন্য কাউকে বলতে পারে বা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।
তবে আমাদের উচিত নিজেকে ও নিজের স্বপ্ন বা স্বপ্নের মানুষগুলোকে সময় দেয়া। আমাদের উচিত স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যে কাজ করা। পৃথিবীতে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ থাকতে পারে। সবার উচিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধের জন্য নিজেকে তৈরি করা। এই পৃথিবীতে আপনি কেন সৃষ্টি হয়েছেন, সমাজ পরিবার বা রাষ্ট্র গঠনে আপনি কি অবদান রাখতে পারবেন সেটা নিশ্চিত করা। “জন্মেছিস যখন একটা দাগ রেখে যা” স্বামী বিবেকানন্দের অতি মূল্যবান এক বাণী। তার আগে আপনাকে অবশ্যই ভাবতে হবে, আপনি কি করতে চান? কি করতে আপনার ভালো লাগে বা আপনি কি করতে পারবেন? সেটা নিশ্চিত করা।
প্রতিটি মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে একটি নির্দিষ্ট স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন পূরণে, সে সারাদিন তার স্বপ্নের মালা গাধার চেষ্টা করে। দিনশেষে হয়তো তার স্বপ্নের মালা আর গাধা হয় না। তারপরেও সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে প্রতিটা মানুষ ঘরে ফেরে। রাতে আবার জোড়া তালি দিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ছাত্র স্বপ্ন দেখে সুন্দর একটি রেজাল্টের। ব্যবসায়ী স্বপ্ন দেখে আরো বড় কোনো প্রতিষ্ঠান গড়বে সে । রাজা স্বপ্ন দেখে আরো বড় রাজ্যের। ভালোবাসার মানুষটি স্বপ্ন দেখে, তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ছোট্ট একটা সংসার। কবি সাহিত্যিক স্বপ্ন দেখে সবাই একদিন ভালো পাঠক হবে। প্রতীক্ষায় থাকা পিয়োসী স্বপ্ন দেখে, সকল বাধা অতিক্রম করে তার ভালবাসার মানুষটি এই বুঝি, তার কাছে আসবে। কিন্তু বেলা শেষে কারো স্বপ্ন পূরণ হয় আবার কারো বা হয় না। তাইতো আধ্যাত্মিক বাউল লালন সাঁইজি আক্ষেপ করে বলেছেন আশা পূর্ণ হল না আমার মনের বাসনা।
রজনীর অন্ধকার
উজ্জয়িনী করি দিল লুপ্ত একাকার।
দীপ দ্বারপাশে
কখন নিবিয়া গেল দুরন্ত বাতাসে।
শিপ্রানদীতীরে
আরতি থামিয়া গেল শিবের মন্দিরে।