ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) শনিবার খুব ভোরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।
এর আগে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরুর ঘোষণা দেয় দেশটি। তবে এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তা সমাপ্তির ঘোষণাও দেয় ইসরাইল। পাশাপাশি তারা এই বিষয়ে আর উত্তেজনা সৃষ্টি না করতে ইরানকে সতর্কও করেছে৷
আইডিএফ-এর বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়ায় আইডিএফ ইরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় লক্ষ্যবস্তুতে 'সুনির্দিষ্ট ও টার্গেটকৃত' বিমান হামলা শুরু করেছে। ইরানি গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, সর্বশেষ এই হামলায় দেশটির সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। তবে, এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।
এক ভিডিও বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, অন্য যেকোনো সার্বভৌম দেশের মতোই ইসরায়েলেরও রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় করা হয়েছে এবং দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে তারা সম্ভাব্য সবকিছু করার পরিকল্পনা করছে।
স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আরেকটি বিবৃতি দিয়ে জানায় যে, তারা তাদের হামলা ‘সম্পন্ন’ করেছে। তবে, ইরান যদি আরেকটি হামলা চালানোর ভুল করে, তাহলে ইসরাইল পাল্টা হামলা চালাতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি বিমান ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির স্থাপনা, ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভার এবং ইরানের অতিরিক্ত বিমান সক্ষমতায় আঘাত করেছে।
ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন জানায় যে, স্থানীয় সময় শনিবার রাত ২টার কিছু পরে তেহরানের চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইরানের ফারস বার্তা সংস্থার ভাষ্যমতে, হামলায় পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম তেহরানে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর, তেহরানের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে আবারও বিকট শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায় যে, এগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, হামলার বিষয়ে ইসরায়েল আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করলেও এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কান টিভি নিউজ জানায়, এফ৩৫, এফ১৬ ও এফ১৫সহ কয়েক ডজন জেট ইরানের ২০টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।
আইডিএফ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি তার ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, এ অভিযান ইসরাইলের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি নস্যাত করে দিয়েছে। তিনি নতুন দফা উত্তেজনা বাড়ানো হলে আরো জবাব দেয়া হবে বলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি না করতে ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
ইরানের প্রত্যক্ষদর্শীরা শনিবার ভোরে দেশটির রাজধানী তেহরানের চারপাশে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরে, ইরানের রাষ্ট্র-পরিচালিত আইআরআইবি টিভি জানায়, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ইসরাইলি হামলার প্রচেষ্টার প্রতিরোধে নিযুক্ত ছিল।
১ অক্টোবর, ইরান ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আনুমানিক ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে আঞ্চলিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন নেতার হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে এই পদক্ষেপকে বর্ণনা করা হয়।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ডানিয়েল হেগারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘'আমাদের বার্তা পরিষ্কার, যারা ইসরাইল রাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে এবং এই অঞ্চলকে আরো ব্যাপক উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিতে চায়, তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।'
আইডিএফ জানায়, ‘কয়েক মাস ধরে ইরানের ধারাবাহিক হামলার' জবাবে শনিবার দেশটিতে হামলা চালানো হয়েছে৷ গত ১ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকেই দেশটি এর জবাব দেয়ার কথা বলে আসছিল৷
এদিকে শনিবারের হামলার পর ইরানের আধাসরকারি সংবাদসংস্থা তাসনিম জানায়, ইসরাইলের যেকোন ‘আগ্রাসনের’ জবাব দিতে প্রস্তুত দেশটি৷
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে সংবাদসংস্থাটি বলেছে, ‘এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে ইসরাইল তার পদক্ষেপের আনুপাতিক জবাবের মুখোমুখি হবে৷'
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইসরাইল ইরানের তেল স্থাপনা বা পারমাণবিক সাইটে নয়, বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে৷
এই হামলাকে ‘ইরানের সার্বভৌমত্ব' ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব৷ সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের পাশাপাশি এই অঞ্চলের উত্তেজনা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসাথে কাজ করা আহ্বান জানিয়েছে তারা৷