যৌথভাবে ২০২৪ সালের চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন।
ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি ‘মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার এবং পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার জন্য’ তাদের এ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নোবেল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি ‘মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার এবং পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার জন্য’ ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুনকে আজ চিকিৎসা বা ওষুধশাস্ত্রে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার ২০২৪ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’এতে বলা হয়, এ বছরের নোবেল পুরষ্কার দুই বিজ্ঞানীকে ‘জিনের কার্যকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়’ সে সংক্রান্ত একটি মৌলিক নীতি আবিষ্কারের জন্য সম্মানিত করেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন কীভাবে বিভিন্ন কোষের বিকাশ ঘটে সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন। তারা মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেছেন। এটি একটি নতুন শ্রেণীর ক্ষুদ্র আরএনএ অণু যা জিন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের একটি সম্পূর্ণ নতুন নীতি প্রকাশ করেছে যা মানুষসহ বহুকোষী জীবের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।’
দুই বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এটি এখন জানা গেছে যে মানব জিনোম এক হাজারেরও বেশি মাইক্রোআরএনএ’র জন্য কোড করে। তাদের আশ্চর্যজনক আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা প্রকাশ করেছে। মাইক্রোআরএনএ জীব কীভাবে বিকাশ লাভ করে ও কাজ করে তার জন্য মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হচ্ছে।’
এ বছরের নোবেল পুরস্কার জিন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোষে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া আবিষ্কারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। জেনেটিক তথ্য ডিএনএ থেকে ট্রান্সক্রিপশন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেসেঞ্জার আরএনএ-তে এবং এরপরে প্রোটিন উৎপাদনের জন্য কৌষিকতন্ত্রে প্রবাহিত হয়। সেখানে এমআরএনএগুলো ডিএনএতে সঞ্চিত জেনেটিক নির্দেশাবলী অনুসারে যাতে প্রোটিনগুলো তৈরি হয় সেভাবে রূপান্তরিত হয়। ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে বেশ কয়েকটি মৌলিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এই প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘আমাদের ক্রোমোজোমের মধ্যে সঞ্চিত তথ্যগুলোকে শরীরের সমস্ত কোষের জন্য একটি নির্দেশাবলীর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিটি কোষে একই ক্রোমোজোম থাকে, তাই প্রতিটি কোষে ঠিক একই সেট জিন এবং হুবহু একই নির্দেশাবলী থাকে। তবু, বিভিন্ন কোষের ধরন, যেমন পেশী এবং স্নায়ুকোষের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কীভাবে এই পার্থক্য উদ্ভূত হয়? উত্তরটি রয়েছে জিন নিয়ন্ত্রণে, যা প্রতিটি কোষকে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক নির্দেশাবলী নির্বাচন করতে বাধ্য করে। এটি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি কোষের মধ্যে শুধুমাত্র সঠিক জিনের সেট সক্রিয় রয়েছে।’‘আমাদের অঙ্গ ও টিস্যুগুলো বিভিন্ন ধরণের কোষ নিয়ে গঠিত। সবকটিই তাদের ডিএনএ-তে অভিন্ন জেনেটিক তথ্য সঞ্চিত রাখে। এই বিভিন্ন কোষ প্রোটিনের অনন্য সেট প্রকাশ করে। এটা কীভাবে সম্ভব? উত্তরটি রয়েছে জিনের ক্রিয়াকলাপের সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, যাতে প্রতিটি নির্দিষ্ট কোষের মধ্যে শুধুমাত্র জিনের সঠিক সেটটিই সক্রিয় থাকে। এটি, উদাহরণস্বরূপ, পেশী কোষ, অন্ত্রের কোষ এবং বিভিন্ন ধরণের স্নায়ু কোষগুলোকে তাদের বিশেষ কার্য সম্পাদনে সক্ষম করে তোলে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এছাড়া আমাদের দেহ ও পরিবেশের পরিবর্তিত অবস্থার সাথে কোৗশিক কার্যক্রমকে খাপ খাইয়ে নিতে জিনের ক্রিয়াকলাপকে অব্যাহতভাবে সূক্ষ্মভাবে সমন্বয় করতে হয়। যদি জিন নিয়ন্ত্রণে হেরফের হয়, তাহলে এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা অটোইমিউনিটির মতো গুরুতর রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অতএব, জিন কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ বোঝা বহু দশক ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।’
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম থেকে আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
নোবেলবিজয়ীর নাম nobelprize.org ও নোবেল পুরস্কার কমিটির ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথম দিনে ঘোষণা করা হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল পুরস্কারজয়ীর নাম। এরপর ছয়টি বিভাগে ছয় দিন নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
সুইডিশ শিল্পপতি নোবেল ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সালে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। ১৯০১ সালে জার্মান জীববিজ্ঞানী এমিল ফন বেরিং ডিপথেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর সিরাম থেরাপি বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রথম লোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
সর্বশেষ গত বছর ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার প্রথম দিন করোনাভাইরাসের টিকার প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য দুই বিজ্ঞানীকে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল বিজয়ী ওই দুই বিজ্ঞানী হলেন ক্যাটালিন ক্যারিকো ও ড্রু ওয়েইসম্যান।