হবিগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদ এখনো হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। মৃত্যুর কূল থেকে ফিরে এসেছেন ঠিকই,শরীরে বুলেট থাকায় স্বস্তি পাচ্ছেন না কোনমতেই। তারপরও তিনি খুশি তার যন্ত্রণার বিনিময়ে হলেও দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে।
চিকিৎকরাপ্রথমদিকে তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু বুকের গুলি বের করতে শিগগীরই তার শরীরে জটিল অস্ত্রোপচার করা হবে। প্রয়োজন অনেক অর্থের। তাই সালেহের স্ত্রী-সন্তানরাঅনেকটাই দিশেহারা ।
সালেহ আহমেদ(৪৫) হবিগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের রাজনগরের বাসিন্দা। পিতা ফজল মোহাম্মদ এবং মাতা মোছা: খোদেজা বেগম। দুজনের কেউই আর বেঁচে নেই পৃথিবীতে। স্থানীয়রা জানান, গত ৪ আগস্ট হবিগঞ্জ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন সালেহ আহমেদ। প্রথমদিকে তাকে সবাই মৃত বলে ধারনা করে কেউ এগিয়ে আসেনি। কিছুক্ষণ পর শ্বাস নিতে দেখেন কয়েকজন ছাত্র। সেই থেকে তাকে দ্রুত প্রথমে হবিগঞ্জ সদর পরে সিলেটের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটারে থাকতে হয়েছে অনেক দিন। তবে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। এখনো তার শরীরে বুলেট রয়ে গেছে। বুলেটের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
চিকিৎসরা বলেছেন, সালেহ কিছুটা সুস্থহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে বুলেট বের করা হবে। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। আবার ঝুঁকিও রয়েছে অনেক। গুলিবিদ্ধ সালেহ বিএনপির সক্রিয় কর্মী। হবিগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির অর্থ সম্পাদক। তিনি বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বলে দাবি করছেন বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতারা।
সালেহ’রস্ত্রী সন্তানেরাপরিবার ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে ভীষণ দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন । ইতোমধ্যে তারা তাদের সম্বল দুটি গরু বিক্রি করে সালেহের চিকিৎসা করিয়েছেন। তবে সুস্থ হয়ে উঠতে এখনওঅনেক দেরি। চিকিৎসার জন্যে কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তবে তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী হালিমা খাতুন।
তিনি জানান, আমার স্বামী আজ প্রায় দেড়মাস ধরে বিছানায় শুয়ে বুলেটের যন্ত্রনায় ছটফট করছেন। এখনো শরীরে গুলি রয়েছে। বের করতে সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন। তবে অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার স্বামীর চিকিৎসায় অনেকেই সাহায্য সহযাগিতা করেছেন, আমার সহায় সম্বল দুটি গরু বিক্রি করে স্বামীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। এখনো মূল অস্ত্রোপচারটা করা হয়নি। কিছুটা সুস্থ হলে অস্ত্রোপচারটাকরে গুলি বের করা হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদ জানান, আমি বুলেটের যন্ত্রণায় এখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছি। বুকে এখনো বুলেট রয়ে গেছে। চিকিৎকরা বলেছেন অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করতে হবে, না হয় ঝুঁকি থেকে যাবে। এ অবস্থায় আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আগের মত করে বাঁচতে চাই। নতুন স্বাধীন দেশে কাজ করতে চাই। আমার কোন দু:খ নেই। এখন বলতে পারি স্বৈরাচারী সরকার দেশ থেকে বিদায় হয়েছে। এটিই এখন আমার আনন্দ।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট এনামুল হক সেলিম জানান, সালেহ আহমেদ একজন বিএনপির সক্রিয় কর্মী। আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন তার শরীরে বড়োঅস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এ জন্য অনেক আর্থিক সহযোগিতার লাগবে। তিনি সকলকে সালেহের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।