জাদুর শহর ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের সমস্যার অন্ত নেই। এ আছে সে নাই। আবার থাকলেও তাতে রয়েছে গন্ডা গন্ডা ভুল। সে হয় সার্টিফিকেট নয়তো লাইসেন্স নিতে গিয়ে। কারও আছে সনদের ভুল। সবমিলে ভুলে ভরা জীবন আর নিত্য নৈমিত্যিক সমস্যা প্রতিক্ষণে উতরাতে হয় রাজধানীর মানুষের। এমন সব সমস্যার মুশকিল আসানের নাম মাহবুবুল হক। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব তিনি। সীমাবদ্ধতার পাহাড় টপকে প্রতিনিয়ত শত ভাগ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন মিষ্টিভাষী মাহবুব।
নিজের ওয়ার্ডের নাগরিকদের সমস্যা যে শুধু দেখেন মাহবুবুল হক তা কিন্তু নয়। আশপাশের মহল্লা থেকেও সমাধান নিতে লোকজন আসেন তার কাছে। কেন আসেন এমন প্রশ্ন করলে শুক্রাবাদ এলাকায় বসবাসকারী গণমাধ্যমকর্মী ইয়াকুব হোসেন লিটু বলেন, ছেলের জন্ম নিবন্ধনের জন্য নিজের ওয়ার্ডে ঘুরছেন ৬ মাস। তারা লিটুকে পাঠিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসকের দফতরে। কখনো ঘুরছেন বার্থ সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রারের অফিসে। কোথাও কোন সমাধান মেলেনি। অতপর মাহবুবের দফতর মুহূর্তেই ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছে ইয়াকুব হোসেন লিটুর।
এ ব্যাপারে ইয়াকুব লিটু তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, মানুষের সঙ্গে একটু হেসে কথা বললেই সবাই সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমার বেলাতে হয়তো তাই হয়েছে। একটুখানি ভাল ব্যবহার যে কতোটা সুফল বয়ে আনে এই নগরবাসীর তা কর্মকর্তাদের অনেকেই বুঝতে চান না। মিডিয়াতে কাজ করার সুবাদে বহুলোকের সঙ্গে পরিচয়। কিন্তু মাহবুবুল হক একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি অফিসে টাইমের বাইরে নিজ দায়িত্বে সময় দিয়ে আমার সমস্যার সমাধান করে দিলেন। এমনকি অন্য আরও কিছু ঝামেলার ব্যাপারে পরামর্শও দিয়েছেন বলে জানান ইয়াকুব লিটুর স্ত্রী।
কথা হচ্ছিল শিয়া মসজিদের বাসিন্দা আহম্মদ হোসেনের সঙ্গে। জন্মনিবন্ধনের ভুল সংশোধন করাতে তিনি এসেছেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড সচিবের দফতরে। কারণ ইন্টারনেট তারা যেমন বোঝেন না তেমনি জানেন না কিভাবে এসব ফরম পূরণ করতে হয়। সব ধরণের হেল্প তারা পেয়েছেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড অফিস থেকে।
আদাবরের অফিসে কোন লোকবল নেই। নিজের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানোর মতো ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ করছেন সাগর নামের এক তরুণ। কথাবার্তায় সাগর বলেন, প্রিন্টিংয়ের কাগজ নাই, ক্রোকারিজ নাই, আপ্যায়নের খরচ নাই, বিদ্যুতের বিল নাই, অফিসের ভাড়া নাই-ইত্যকার সমস্যার মধ্যেও মাহবুব সাহেব আগলে রেখেছেন সর্বিক সেবা। জনগণের খেদমতদারি করতেই তার ভাল লাগে।
খবর নিয়ে জানা গেলো, কোথাও কোথাও জন্মসনদ নিতে ১০ দিনের বেশি লেগে যাচ্ছে। এমনকি নিবন্ধন ও সনদ সংশোধনে সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা দিতে হয় কারও কারও। সেখানে অনায়াসেই সব ধরণের সেবা সরকারের নির্ধারিত খরচ দিয়ে পেয়ে যাচ্ছেন জনগণ। এলাকাবাসী তাই বলে থাকেন-মাহবুব সাহেব একাই একশ। এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার জেনারেল যাহিদ হোসেন ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মির্জা তারিক হিকমতের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাহবুবের মতো অনেকেই দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ওয়ার্ড সচিবগণ খাওয়ার সময়ও পান না ঠিকমতো। এতোটা ভিঁড় থাকে মানুষের প্রতিনিয়ত। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেট ও ফরম পূরণের অনেক কিছুই না বোঝার কারণে সচিবদের আরও বেগ পেতে হয়। নাম প্রকাশ না শর্তে কাউন্সিলরদের একজন বলেন, ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা বেশি একটা ভাল নয়। নানান ধরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও যথাসাধ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সচিবগণ। কিভাবে প্রতিদিনের খরচগুলো তারা সমালাচ্ছেন তা ভেবে আমরাও অবাক হচ্ছি।
শ্যামলী সমাজ উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত মুরুব্বিদের একজন বলেন, এ শহরের সবাই নেতা। সবারই লোকজন আছে উপরমহলে। কী ফোনে কী সামনাসামনি। অফিসে এসে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলে। অথচ সিটি করপোরেশন অফিসে সেবা নিতে গিয়ে নিজের ফরমটাও পূরণ করে নিয়ে যায় না। আবার কিছু বললেও সাংবাদিকদের অভিযোগ করে এই শ্রেণিটি।
মায়ের মৃত্যু সনদ আনতে গিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড সচিব মাহবুবুল হকের সেবা পেয়ে যারপরনাই তুষ্ট আদাবর ১ নম্বর সড়কের বাসিন্দা সীমা আলী। উচ্চশিক্ষিত সীমার ধারণা, মাহবুবুল হক নিশ্চয় সেবার এই মানসিকতা নিজের পরিবার থেকেই পেয়েছেন। নইলে এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি কিভাবে অটুট রেখেছেন নিজের মানসিকতা আর সততা। মাহবুব তাই একাই একশ। তার মতো অফিসার সবখানে থাকলে কারও কোন টেনশন নিতে হতো না সিটি করপোরেশন নাগরিকদের।