কুঙ্গ থাঙের ফেসবুক থেকে
মুর্তি ভাঙার ছবি দিই না আর৷ খাগড়াছড়িতে বুদ্ধের মুর্তি পুড়িয়ে ফেলেছে, ফরিদপুর ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জে দুর্গাপ্রতিমা ভেঙে ফেলেছে এইসব ঘটনায় বিচলিত হওয়া বাদ দিছি৷ মানুষ পুড়িয়ে না মারলেই হলো৷ বেঁচে থাকলে অনেক প্রতিমা গড়া যাবে৷ মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ফেলতেছে এইটা হলো সবচেয়ে বিচলিত হবার মতো ঘটনা৷
আমি এই ভূখন্ডের মানুষদের চিনি৷ নানান রেজিমের স্বাক্ষী আমি৷ তারা বদলায় নাই৷ দমিয়ে রাখা যায় মাত্র৷ হাসিনা স্বৈরাচারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে দমিয়ে রেখেছিল৷ যে স্বাধীনতা তারা পলিটিক্যাল সরকারের আমলে পায় নাই, এপলিটিক্যাল সরকার তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে৷
তারপরেও কিছু শিক্ষিত সচেতন সংবেদনশীল মানুষ ছিল, মানে তেমনই জানতাম, তারাও খোলস ছেড়ে বের হয়ে এলো৷ সবাই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকে৷ ভেতরের দানবটিকে দমিয়ে রাখা মানুষের জন্য খুব কঠিন কাজ৷
আপনি দেখে থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মব লিঞ্চিং হওয়ার পর কেউ হল ভাঙতে যায় নাই৷ ছাত্রদের আক্রমণ করে নাই৷ উৎসব মন্ডলকে নৃশংসভাবে যারা পি়টি়য়েছিল তাদের ঘরবাড়িতে কেউ আগুন দিতে যায় নাই৷ মাজার যারা ভেঙে দিল তাদের উপর কেউ হামলা করে নাই৷
কিন্তু খাগড়াছড়িতে এক রেপিস্টের উপর যখন মব লিঞ্চিং হয় তখন একযোগে পাহাড়ি জনপদে বাস করা জাতিগোষ্ঠিদের উপর তারা হামলে পড়ল, বসতবাড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে দিল৷ এদের জাতিবিদ্বেষ নির্দিষ্ট কোনো জাতির প্রতি আবদ্ধ এমনও না, ওখানে ১১টির বেশি জনগোষ্ঠি বাস করে৷ কিন্তু কোনো মারমার দোষে চাকমাদের গ্রাম পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, কোনো চাকমার দোষে হয়তো ম্রোদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে৷ নিজের জাতের বাইরে হলেই তাকে শত্রু সাব্যস্ত করে ফেলতেছে৷
আপনি যদি ইতিহাস একটু ঘুরান, এক রসরাস দাসের কারণে গোটা নাসিরনগর পুডিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ এক উত্তম বড়ুয়ার কারণে গোটা রামু ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল৷ যদিও এদের কেউ দোষী কিনা কখনই প্রমাণিত হয়নি৷
এই মূর্খতা, বর্বরতা ও হিংস্রতার বিপক্ষে দাঁড়ানো কিছু মানুষ ছিল, আজ তারা হারিয়ে গেছে৷ এক দু'জন যারা আছে তারা নিরপেক্ষতা মেইনটেইন করতে খাবি খাচ্ছে৷ বামপন্থী পরিচয় দিয়ে লেনিন চে গুয়েভারার ছবি লাগিয়ে ঘুরেছে, তারা হালকার উপর 'পাহাড়ে কেন অশান্তি' বলে কেটে পড়ছে৷ নারীবাদী তকমা লাগিয়ে ফেসবুক দাপানো আন্টি পাশের বাসার ভাবীকে ভূয়া ফটোকার্ড দেখিয়ে বলছে, দেখেন ভাবী রাঙ্গামাটিতে মসজিদ পুড়ায় দিছে আর ওরা নাকি স্বাধীনতা চায়৷ চ্যাপ্টারের যে বকরিগুলো একদা ধর্ষকের লিঙ্গ কাটার ডাক দিয়েছিল, তারাও ধর্ষকের উপর অত্যাচারে চোখের পানি ফেলছে৷ এদিকে নির্দোষ পাহাড়ি জনপদ যে পুড়ে যাচ্ছে তা নিয়ে রা পর্যন্ত নাই৷
অপরাধীকে পি়টিয়ে মে়রে ফেলার লাইসেন্স কারা দিচ্ছে, কারা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মব লিঞ্চিংএর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাচ্ছে না, কারা ননজুডিশিয়াল কিলিং এর পরম্পরা জারি রাখতে চাচ্ছে— এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে৷ ফলে যায় দিন খারাপ, আসে দিন ভাল বলার সুযোগ নাই ৷ মুলতঃ যায় দিন ও আসে দিন দুটোই খারাপ ও ভয়ংকর৷