চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে সচিবের দায়িত্বে থাকা নারায়ণ চন্দ্র নাথ ও সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল। গত বছরের শেষের দিকে সেটি প্রকাশ্যে আসে। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে বাংলা বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পান নক্ষত্র। তবে বাংলায় এ পেলেও অতিরিক্ত বিষয়ের পয়েন্ট যুক্ত হওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে তিনি জিপিএ ৫ পান।
ওই বাংলা বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে নক্ষত্রের পরিবারের লোকজন দেখেন আগে থেকে অনলাইনে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য কে বা কারা আবেদন করে দিয়েছেন। তাও শুধুমাত্র একটি বিষয়ে না, ১২টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন। এটির তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মোবাইল ফোন নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নক্ষত্র দেবনাথের নামে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনটি করা হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৫ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
পুলিশ জিডির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর প্রতিবেদন উল্লেখিত পরামর্শ মোতাবেক বনশ্রী নাথ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব আবদুল আলীম ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরই মধ্যে সচিবের ছেলের ফলাফল নিয়ে নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে মাউশি। তদন্ত কমিটির দুই সদস্য গত ৩ জুন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে যান। তারা হলেন- কমিটির আহ্বায়ক মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন এবং সদস্য মাউশির ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান।
এদিকে মাউশির কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ঘটে আরেক কাণ্ড। ওইদিন কমিটির সদস্য না হয়ে সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের উপসচিব বেলাল হোসেন।
বিষয়টি নিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দিকে আঙুল তুলেছেন সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ। ওইদিন তদন্ত কমিটির সদস্য না হয়ে একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন। এটি আপনারা দেখেছেন। তার কারণে কেউ যথাযথ বক্তব্য দিতে পারেননি। আমি মনে করি প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়া কেউ তো আর এভাবে উপস্থিত থাকতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, তদন্ত কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বোর্ডের চার কর্মকর্তাকে আমি দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সেই চারজনের একজন উপসচিব বেলাল হোসেন। তিনি তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করতে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন।
মূলত এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষা বোর্ডের সচিব নারায়ণ এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়।
জালিয়াতি ও অনিয়মসহ বোর্ডের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি বেশিদিন হয়নি। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন ঘটনাগুলো আরও আগের। তবে সাম্প্রতিক এসব কর্মকাণ্ডে শিক্ষা বোর্ডের ইমেজ সংকট হচ্ছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বোর্ডের সম্মান ফিরিয়ে আনার।