কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার টিউবওয়েলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ । উপজেলা স্বাস্থ্য ও প্রকৌশলী অফিস জানায় ,জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে সমাধান হবে না বলেও সাফ জানান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা সুমন আলী।
পদ্মা গড়াই বিধৌত কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সাধারণ মানুষের মাঝে দীর্ঘ প্রায় দুই মাস কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভাবসা গরম ও তীব্র পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের জীবন অনেকটা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
একদিকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব ও তীব্র ভাবসা গরমে শিশু ও বৃদ্ধসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে । কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মামুন হোসেন জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই এলাকার উপর দিয়ে তীব্র গরম উপলব্ধি হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব।
বেশিরভাগ পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে খোকসা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায়। পৌরসভার মাঠপাড়া এলাকার প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান ১৭ বছর আগে টিউবওয়েল দিয়েছিলাম সেই টিউয়েলের পানি আমরা বাড়িতে সবাই পান করতাম। দীর্ঘদিন পর গত দুই মাস হল আমাদের টিউবয়েলের কোন পানি পাচ্ছি না, ফলে অন্য বাড়ির সাব মারসেবল থেকে পানি নিয়ে আমাদের খেতে হচ্ছে ও গৃহস্থলী কাজ করতে হচ্ছে।
উপজেলা আবহাওয়া ও পরিবেশ বিজ্ঞানী দের অভিমত নদী রানা খাল বিল ও বাড়ির পাশে ডোবা এবং ছোট বড় পুকুরের ভরাট করে আবাসনে নিয়ে আসাই পানির এই তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মনুষ্য সৃষ্টি এ সকল সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষ পানীয় জলের প্রাদূর্ভাব সহ কৃষিকাজ চরম ব্যাহত হচ্ছে। খোকসা উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ গ্রাম উত্তর শ্যামপুর । এখানে দেড়শ ঘরের অধিক লোকের বাস । সবগুলো টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে আছে । প্রতিবছর এরকম সমস্যা দেখা দেয় ।
খোকসা সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বললেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এভাবে নেমে যাওয়ায় আগামীতে সাধারণ মানুষের জন্য অসহায় সংকেত বলে মনে করলেন। তিনি মনে করেন এখনই বৃষ্টির সময় পানি সংরক্ষণ করে সেই পানি ব্যবহারের জন্য সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। পানি সম্পদ রক্ষায় সকলকে আরো মিতব্যয়ী হতে হবে বলেও তিনি মতামত দেন।
খোকসা পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সীমান্ত জানান, আগে এত খাবার পানি সংকট হয়নি। এখন প্রায় প্রতিটি টিউবয়েলই অকেজো। টিউবয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলেও পানি আসছে না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্ট করছি। জানিপুর ইউনিয়নের ইচলাট গ্রামের কাজল জানান, আমাদের তো গভীর নলকূপ স্থাপনের সামর্থ্য নেই। তাই এখন পুকুরের পানিতেই জীবন বাঁচাতে হচ্ছে।
খোকসা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সুমন আলী বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান । এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে কি পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন সে বিষয়েও নীরবতা পালন করেন । কতগুলো গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে সেসব তথ্য দিতেও তিনি নারাজ । তিনি সবকিছুই জনপ্রতি নিধি দের উপরে দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করেন । এভাবে বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকলে হয়তো একদিন খোকসা বাসির জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে । এই পানি সংকটের আশু সমাধান চায় খোকসা বাসি । পরিকল্পিতভাবে গভীর নলকূপ স্থাপনের দাবিও জানান তারা ।