প্রতিকি ছবি
বুকভরা আশা নিয়ে জেলা শহরে পড়তে চেয়েছিল মেয়েটি। নিয়মকানুন মেনে ফরমও পূরণ করেছিল কিন্তু শিক্ষকের লালসার কাছে চুরমার হয়ে গেলো সব স্বপ্ন। অন্য কোথাও ভর্তি হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত মেয়েটি। বলছিলাম প্রত্যন্ত গাঁয়ের সুমাইয়া আক্তারের কথা।
ফরিদপুরের কানাইপুর ইউনিয়ন সদর থেকে দূরবর্তী গ্রাম করিমপুরের মেয়ে সুমাইয়া। বাবা কবির পাটোয়ারী চেয়েছিলেন মেয়েকে সারদা সুন্দরী কলেজে পড়াবেন। সেই মতো ফর্ম পূরণ করে যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু কলেজের ভর্তি কমিটির প্রধান জাহাঙ্গীর আলমের লোভের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছে পরিবারটিকে।
সূত্র বলছে, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান সারদা সুন্দরী কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মনোনীত হন সুমাইয়া আক্তার। কিন্তু ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম সুমাইয়ার বাবা কবির পাটোয়ারীর কাছে কিছু টাকা দাবি করেন। জাহাঙ্গীর অন্যদের অবৈধ সুবিধা দিতে গিয়ে কপাল পোড়ে সুমাইয়ার। ভর্তি কমিটি এ বছর আরও কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একইভাবে টাকা পয়সা নেয়। বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গ করে অগ্রিম ভর্তিও করেছে এসব ছাত্রীদের। যে কারণে রেজাল্টের দিক থেকে ওদের অনেক ওপরে থাকলেও সুমাইয়াকে আর ভর্তি করতে পারেনি সারদা সুন্দরী কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর এর পুরো দায় গিয়ে পড়ে ভর্তি কমিটি প্রধান জাঙ্গীরের ওপর।
শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম এর আগেও এমন একাধিক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার এসব দুই নম্বরী আচরণের কারণে অন্য শিক্ষকেরাও পাশ কাটিয়ে চলেন। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তিনজন শিক্ষক জাহাঙ্গীরের হাতে লাঞ্চিতও হয়েছেন। এসব কাজে কলেজ অধ্যক্ষ কাজী গোলাম মোস্তফারও সমর্থন রয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানান। কারণ সুমাইয়া কা-ের মতো এতো বড় দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ার পরও প্রফেসর কাজী গোলাম মোস্তফা নিশ্চুপ থাকেন। ভেতরে ভেতরে আরও অনেক শিক্ষক প্রিন্সিপালের এসব কাজে যারপরনাই ক্ষুব্ধ। কিন্তু পানিশমেন্টের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস করেন না। কারণ জাহাঙ্গীর টাকার বিনিময়ে কয়েকটি গ্রুপের পাশাপাশি রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গ করে। যার রেজাল্ট ভালো তাকে ভর্তি না করে উল্টো খারাপ রেজাল্টের প্রার্থীকে ভর্তি নিয়েছেন। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী গোলাম মোস্তফাকে জানানো হলে ব্যাপারটি তিনি দেখবেন বলে ফোন রেখে দেন। আবার জাহাঙ্গীর আলম পুরো ব্যাপারটিই অস্বীকার করেন।
ওদিকে ঢাকা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর ওয়েবসাইটে প্রাথমিকভাবে মনোনীত ছাত্রীদের তালিকা প্রকাশ করে। অথচ বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে সরকারি সারদা সুন্দরী কলেজের ভর্তি কমিটি চূড়ান্ত তালিকা গোপন করে ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। অগ্রিম ভর্তির ব্যাপারটি পুরোপুরি চেপে যায় সারদা সুন্দরী কলেজ কর্তৃপক্ষ। অথচ বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে ছিল-২২ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি নিতে হবে। সুমাইয়া আক্তার কলেজের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঐ সময়ের মধ্যেই টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছিল। অথচ জাহাঙ্গীর আলমের কমিটি সুমাইয়ার ভর্তি রশিদে ঐ দিনের তারিখ না দিয়ে এ্যাডভান্স ২২ জানুয়ারি তারিখ উল্লেখ করে। ভর্তির আগে মাইগ্রেশন চালু অবস্থায় সুমাইয়া আক্তার ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ চয়েজ দিয়ে রেখেছিল। যেহেতু সারদা সুন্দরী কলেজ কর্তৃপক্ষ সুমাইয়ার ভর্তি চূড়ান্তভাবে গ্রহন করেছে তাই তার কাছে মাইগ্রেশনের ব্যাপারটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
সারদা সুন্দরী কলেজে ক্লাস করতে এসে যখন পরিচয়পর্ব শুরু হয়ে তখন সুমাইয়া জানতে পারেন যে, সে সারদা সুন্দরীর ছাত্রী নন। কারণ তার ভর্তি বাতিল হয়ে গেছে। তার চান্স হয়েছে রাজেন্দ্র কলেজে। কিন্তু ততোদিনে রাজেন্দ্র কলেজের ভর্তিও শেষ হয়ে গিয়েছে। এক পর্যায়ে সুমাইয়ার বাবা সারদা সুন্দরী কলেজে ছুটে এসে জাহাঙ্গীরসহ কমিটির অন্য শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন। পরে ভয় ভীতি দেখিয়ে ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কলেজ থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। এদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তারের জীবনের স্বপ্ন ভঙ্গ করে দেয়ায় অন্য ছাত্রীরাও ভেঙে পড়েছে। এই কলেজের প্রশাসনিক দুর্বলতা তাদের মধ্যেও দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। যারা পড়ালেখা করছে তারাও আবার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে পারবে কি না, কিংবা রেজাল্ট অন্য রকম হয়ে যায় কি-না তা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরাও। সবমিলে শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে বিচার দাবি করেছেন সারদা সুন্দরী কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।