![মেহেরপুরের কৃতী সন্তান কথাসাহিত্যিক হাবিব আনিসুর রহমান আর নেই॥ মেহেরপুরের কৃতী সন্তান কথাসাহিত্যিক হাবিব আনিসুর রহমান আর নেই॥](https://www.xfilesbd.com/media/imgAll/2024March/001-2502051628.jpg)
বাংলা কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, মেহেরপুরের কৃতী সন্তান হাবিব আনিসুর রহমান আমাদের মাঝে আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুর ১২:১০ মিনিটে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকার শাহবাগের কাঁটাবন সেন্ট্রাল মসজিদে আজ ৫ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব জানাযার নামাজ হবে ইনশাআল্লাহ।
তার প্রয়াণে বাংলা সাহিত্য এক নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যিককে হারালো, যার লেখায় উঠে এসেছে সমাজের নিগূঢ় বাস্তবতা, ইতিহাসের বর্ণিল চিত্র, প্রান্তিক মানুষের যন্ত্রণা, শোষণের চিত্র, এবং নাগরিক জীবনের টানাপোড়েন।
তাঁর স্ত্রী কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস জানান,‘আমার কর্তা আজ ১২.১০ মিনিটে আমাদের ছেড়ে গেলেন। আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসিব করুন।আপনারা দয়া করে তাঁকে ক্ষমা করবেন এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করবেন।’ হাবিব আনিসুর রহমানের ছোট ভাই আমাকে এই শোক সংবাদ জানান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন।
১৯৫৪ সালে মেহেরপুরের বল্লভপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া হাবিব আনিসুর রহমানের শৈশব-কৈশোর কেটেছে এক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষিত পরিবারে। পিতা এস. এম. হাবিবুর রহমান ও মাতা বেগম আশরাফুন্নেসার সন্তান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স সম্পন্ন করে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও যশোর সরকারি এম এম কলেজে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘদিন। পরে প্রফেসর হিসেবে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন এবং পূর্ণমাত্রায় মনোনিবেশ করেন সাহিত্যচর্চায়।
তার সাহিত্যকর্মের মূল উপজীব্য ছিল সমাজের উপেক্ষিত মানুষের জীবনসংগ্রাম। ‘গুলেনবারি সিনড্রোম ও অন্যান্য গল্প’, ‘অষ্টনাগ ষোলোচিতি’, ‘পোড়ামাটির জিলাপি ও অন্যান্য গল্প’, ‘পক্ষী ও সারমেয় সমাচার’, ‘পুষ্পরাজ সাহা লেন’, ‘আমাদের নতিপোতা গ্রামের ইতিহাস’, ‘নেফারতিতি’, ‘কথা উপকথা’, ‘রৌদ্র ও ত্রাতাগণ’ (মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস), ‘বন্দিভূতের ফন্দি’ (কিশোর গল্প), ‘ছোটকু মোটকু’ (কিশোর গল্প) প্রভৃতি গ্রন্থে তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অন্তর্দহনকে তুলে ধরেছেন।
হাবিব আনিসুর রহমান সাহিত্য জগতে একজন নিভৃতচারী লেখক হলেও তার লেখার শক্তি ছিল অনবদ্য। কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১১ সালে ‘জীবননগর সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা’ এবং ২০১৫ সালে ‘কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ পদক লাভ করেন।
তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য এক শক্তিমান লেখককে হারালো। তার সাহিত্যকর্ম, ভাবনা ও সৃষ্টিশীলতা পাঠকদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।