জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টির সাথে বৈষম্য শুরু হয়েছে। রাজনীতিতে আমাদের কোনঠাসা করতে চাচ্ছে সরকার। আমাদের স্বাভাবিক রাজনীতিতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানী মূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। সে হিসাবে আমরা নব্য ফ্যাসিবাদের স্বীকার মনে হচ্ছে।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে নরসিংদি জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশ এখন সঠিকভাবে চলছে না। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এমন গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মাঝে হাহাকার উঠছে। সাধারণ মানুষ আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। আধাপেট খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিভিন্ন কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এক কথায় দেশে অভূক্ত ও অর্ধভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। দুর্বল আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়লে তখন যেকোন অজুহাতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে দেশের ব্যবসা-বানিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে, দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এতে অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হলে রাজনীতিতে অস্থীতিশীল ও বিপদজনক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমান সরকার স্বাভাবিকভাবে দেশ চালাতে পারছেন না। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছেন, তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু তারা সফল হতে পারছে না। তাদের নির্দেশ ও পরিকল্পনা অনেক সময় কার্যকর হচ্ছে না, এটাই বাস্তবতা।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসময় আরো বলেন, এমন বাস্তবতায় দেশে একটি শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন যাতে জনগনের ইচ্ছার সঠিক প্রতিফলন হয়, সে ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার ছাড়া এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব মনে হচ্ছে না।
দেশ ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যে পথে হাটতে হবে, সরকার সে পথে হাটছে বলে মনে হচ্ছে না। দেশের চল্লিশটির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দলের সাথে বর্তমান সরকার ঐক্য করছে। এতে দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যাচ্ছে আলোচনার বাইরে।
আমাদের ওপর নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বৈষম্যমূলক আচরণ ও ফ্যাসিবাদ শিকার আমরা হচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। খবরের কাগজে যেনো আমাদের সংবাদ না আসে সেজন্য তারা অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ দিতে পারছে না গণমাধ্যম, যেটা বিগত সরকারের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। দেশের মানুষ বিচার পাচ্ছেনা, সেবা পাচ্ছে না, আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর কাছে সহায়তা পাচ্ছে না।
এ অবস্থায় দেশ একটি অনিশ্চিত ও অশান্ত পরিস্থিতির দিকে ধাবিত বলে আশংকা করছি।
জাতীয় পার্টি নরসিংদী জেলা শাখার ১১১ সদস্য বিশিষ্ট্য অনুমোদিত কমিটির সাংগঠনিক আলোচনা সভায় ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মোঃ মজিবুল হক চুন্নু, জেলা সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. মোঃ শামীম হাসান ও সদস্য আবু সাঈদ স্বপন। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নি, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটরি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন খান, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান ও জেলা নেতৃবৃন্দ। সংস্কার হতে হবে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্টে
- গোলাম মোহাম্মদ কাদের
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয়। এই সরকার সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে বলেও সন্দেহ আছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারই দেশের বর্তমান অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তিনি বলেন, অনেক আগেই আমরা সংবিধান সংস্কারের দাবী তুলেছি। সংস্কার হতে হবে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্টে। নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া কোন সংস্কারই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যদি সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে সংস্কার হয় তা নির্বাচিত পার্লামেন্টে গ্রহণযোগ্য করা যায়। বর্তমানে দেশকে বিভক্ত করে যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে তা একপেশে ও বাস্তবতার ততটা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একারণে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আমরা আগ্রহি নই। নির্বাচিত পার্লামেন্টে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সভাপতির বক্তৃায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসসময় তিনি বলেনর, অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কেউ জানেনা কেমন হবে দেশের ভবিষ্যত। এমন বাস্তবতায় আমাদের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একটি নির্বাচন হবে, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু জাতীয় পার্টির সাথে বর্তমান সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। আমাদের স্বাভাবিক রাজনীতিতে বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বর্তমান সরকার সবার জন্য লেভেল প্লেইংফিল্ড করতে পারবে? নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে?
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সরকারের সহায়তায় কয়েকটি রাজনৈতিক দল রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা সরকারের সাথে সম্পর্ক রেখে সরকারি দলের মত আচরণ করছে। তারা ক্ষমতার মোহে দেশকে বিভক্ত করছে। বিভিন্ন অজুহাতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাচ্ছে। অপরদিকে দেশে অরাজক পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ও বেকারত্বের বিস্তার ব্যাপক। একারণেই, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জাতীয় পার্টিও মাঠে থাকবে, আমরা দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে কখনোই পিছপা হব না। শত নির্যাতনেও আমরা মানুষের অধিকারের প্রশ্নে চুপ থাকবো না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মানুষের জান-মালের ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। প্রশাসনের কাছে কোন সেবা পাচ্ছে না মানুষ। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে রাজপথেই থাকবো।
প্রেসিডিয়াম সভায় বক্তৃতা করেন, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ.টি.ইউ.তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, আব্দুর রশীদ সরকার, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ দিদার বখ্ত, নাজমা আখতার, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, শেরীফা কাদের, মাসরুর মওলা, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ আরিফুর রহমান খান, মোঃ আশরাফুজ্জামান আশু।