বিতর্কে থাকা জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার তানজিম হাসান সাকিব এখন রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নারী বিদ্বেষ, জাতীয় সংগীত অবমাননা ও সাম্প্রদয়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাকে নিয়ে চলছে বিতর্ক। এর মধ্যেই তাকে সাপোর্ট করে সাংবিধানিক অধিকারের কথা তুলে ফেসবুক পোস্ট করে বিতর্কের মূখে সেটা ডিলিট করেন আরেক ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ।
তবে মিরাজের বিতর্কিত অবস্থান এবারই প্রথম নয়। এবারের কাণ্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সামনে আসলো মিরাজের আগে করা ধর্মীয় উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের আরেক ঘটনা। সেবার ভোলায় সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে উস্কানিমূলক পোস্ট করে তা ডিলিট করলেও তার আগেই হয়ে যায় অনেক ক্ষতি।
ঘটনা ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবরের। ওই সময়ে ভোলায় কথিত 'ধর্মানুভূতিতে আঘাত' দেয়ার হুজুগ তুলে ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছিলো। এক সংখ্যালঘু তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কুটক্তি করা হয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন ৪ জন। এই ঘটনা নিয়ে সংকট যখন চরমে সেই সময়ে রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘটনা নিয়ে উস্কানিমূলক পোস্ট দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
যা নিয়ে সোশ্যাল সাইটে তখন ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পোস্টটি মুছে দিতে বাধ্য হন এই ক্রিকেটার। তবে তার আগেই পোস্টের কারনে ‘তৌহিদী জনতা' ব্যানারে সৃষ্ট হানাহানি নতুন মাত্রা পায়। ভোলার ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ এমনকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বলেছিলেন, গুজব ছড়িয়ে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে দ্বীপ জেলাটিতে।
পরে প্রমাণ মেলে ভোলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সোহেল রানা দুদিন আগে শুক্রবার রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে তাঁর ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে দুটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে এই গুজব ছড়ান। তার আগেই বিপ্লব চন্দ্র শুভর ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়। পরের দিন শনিবার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে পুলিশ আটকও করে। তারপরেও 'তৌহিদী জনতা' ব্যানার নিয়ে একদল মাদ্রাসার ছাত্র পুলিশের ওপর হামলা করে ।
এই ঘটনায় মিরাজের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পোস্ট পরে ডিলিট করলেও স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পরে। তার পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, 'শতকরা প্রায় ৯০% ইসলাম ধর্মাবলম্বী কট্টর মুসলিম প্রধান দেশ সুজলা সুফলা সবুজের ছায়ামূর্তি ধারক আমাদের বাংলাদেশ। অথচ আমাদের দেশেই খ্রিষ্টীয় লেখক মাইকেল এইচ হার্টের করা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মণিষীর জীবনীতে প্রথম স্থানে থাকা রহমতের নবী 'হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে গালি দিবে অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী কেউ, সেটা মুসলিম হয়ে আমার সইবো কিভাবে? আমরা এগুলো সইতে পারি না, কারণ আমরা আল্লাহ, তার রাসূল এবং ইসলাম ধর্মকে ভালোবাসি। এমন শাস্তি হোক, যাতে অন্য কেউ এই ধরণের কাজ করার সাহসই না পায় ভবিষ্যতে।'
মিরাজের এই পোস্ট নিয়ে এক শ্রেণির সাম্প্রদায়িক শক্তি উস্কানি দেয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। ফেসবুকে হাজার হাজার বার মিরাজের পোস্ট শেয়ার করে উগ্রবাদীরা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে দেশের শুভ বোধ সম্পন্ন মানুষ অবাক হয়ে যান এই ভেবে যে, জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার কীভাবে এমন পোস্ট দিতে পারেন! ঘটনায় তখন অনেকে আটক হন। তবে বলা হয়, জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়ার বদৌলতে ছাড় পেয়ে যান মিরাজ!