পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে বঙ্গমাতার অবদান রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমিকে শস্য-শ্যামলারূপে গড়ে তুলতে জাতির পিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গমাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুুন নেছা মুজিব।
আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন আরো বলেন, ‘ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন প্রিয়তম বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন।’
দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গমাতার সারাজীবনের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আড়ালে থেকে তার গার্হস্থ্য জীবনের কর্তব্য পালন আর মন-মস্তিষ্কে স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহযোগিতা করে গেছেন আজীবন। খোকা থেকে শেখ মুজিব। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা। এগুলোর পেছনে আজীবন স্বামীকে সাহস জুগিয়েছেন তিনি। দিয়েছেন অনুপ্রেরণা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
’বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা অবিচ্ছেদ্য সত্তা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ -এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য রচনায় যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য, যিনি সোনার বাংলা বিনির্মাণে আড়ালে অন্তরালে থেকে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান, তিনি হলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গ্রথিত, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গমাতা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে। এমনকি ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বর্বর ঘটনা বিরল। এটা বাঙালি জাতির জন্য কলঙ্কের। আরো কলঙ্কের বিষয় হলো - হত্যাকারীদের মধ্যে পাঁচজন এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। এদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, এমপি বলেন,বঙ্গমাতা বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্যের শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন শক্তি হয়ে, অনুপ্রেরণা হয়ে।’
অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনিই জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এইসব নির্দেশনা তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন নানা উপায়ে। তিনি এক মহীয়সী নারীর অনন্য উদাহরণ, যিনি নিজের ও পরিবারের স্বার্থ ত্যাগ করে কাজ করেছেন বাঙালি জাতির জন্য। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গমাতার মহান ত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্মর হয়ে থাকবে।’
আলোচনা সভার শেষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে শাহাদাত বরণকারীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।