প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোন সুযোগ নেই। তাহলে তারা কেন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে?’ তিনি আরো বলেন, ‘সবাই এটা জানে (উচ্চ আদালতের রায় এবং সংবিধান সংশোধন)। এটা জানার পরও তারা কেন সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করছে? এর উদ্দেশ্যটা কী? এর অর্থ গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করা।’
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফরের ফলাফল নিয়ে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলে। শেখ হাসিনা বলেন, কোনো অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে যে- একজন নির্বাচিত সরকারপ্রধানের স্থলাভিষিক্ত হবেন অন্য নির্বাচিত সরকারপ্রধান এবং সেই অনুযায়ী সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে চলমান গণতান্ত্রিক ধারা ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ধ্বংস করে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, এখন এটা দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে যে- তারা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ চায়, নাকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল- আবার তা চায়।
বিএনপিসহ আরো কয়েকটি দল রাজপথে নেমেছে- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন যে, তাদের সমস্যা কী ও তাদের অর্থের উৎস কোথায়?
তিনি আরো বলেন, সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আগামী সাধারণ নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. আনিসুল হক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে, কারণ ‘আমরা অনেক সংগ্রাম ও রক্তের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি।’
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় দেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে-উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা কি চান না এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক?
শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের পরের পরিস্থিতির কথা ভাবার আহ্বান জানান-যখন কোনো নির্বাচন ছিল না, জনগণের ভোটাধিকার ছিল না ও সব অধিকার একটি নির্দিষ্ট স্থানেই আবদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা (ভোট) জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে কেউ যা কিছু বলতে পারে। তবে, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং সে কারণেই দলটি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, নির্বাচন গণতান্ত্রিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং যে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তিনি চারবার ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছেন। এমন নয় যে তিনি ক্ষমতা এসে তা ভোগ করেছেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের পুরস্কৃত করেছে এবং গণতন্ত্রকে হাইজ্যাক করে গণতন্ত্রের প্রবক্ত হয়েছে- সাধারণত, তারা দেশের কল্যাণ চায় না বরং তারা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তারা দেশী ও বিদেশী শক্তি উভয়ের সহায়তায় দেশে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সচেতন নাগরিকরা এটাকে গুরুত্ব দেবে না।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সাড়ে ১৪ বছর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিল, জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা কী ছিল আর এখন বাংলাদেশের অবস্থা কী হয়েছে-তা তারাই বিচার করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে কিনা, জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে কিনা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে কি না- সচেতন নাগরিকদের আগে তা বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমার (জনগণের উপর)আস্থা আছে। কারণ, আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘তারা আমাকে ভোট না দিলে আমি এখানে (্ক্ষমতায়) থাকব না, কিন্তু কখনোই ভোট কারচুপি করব না।’ তিনি বলেন, যারা ভোট ডাকাত এবং যারা খুন ও কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই এখন আওয়ামী লীগকে ভোট কারচুপির অপবাদ দিচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করেছে এবং সেই আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন করেছে। ছবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ইভিএমসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে ইসি তাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, যারা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন পছন্দ করে না, তারাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, তিনি (সবাইকে) বারবার বলেছেন যে নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা করবে, নির্বাচন সেই নির্ধারিত সময়েই হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেবে এবং নির্বাচন হবে, জনগণ তাদের ভোট দেবে। তারা যদি আমাকে ভোট দেয়, তবে আমি এখানে থাকব, অন্যথায় নয়।’