বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট দেশনায়ক তারেক রহমান নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবমুখী ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী দুর্বিসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে দিশেহারা। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো- আপনারা জিনিসপত্রের দাম কমাতে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাস্তবমুখী এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন। মানুষকে আধপেটা রেখে কোন কথায় গেলানো সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার হয়তো বাড়ানো যেতে পারে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তৃতায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
জেডআরএফ-এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা রজতজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় জেডআরএফের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. জুবাইদা রহমানও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড.আব্দুল মঈন খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। জেডআরএফ-এর নির্বাহি পরিচালক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এতে সংগঠনের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অর্জন বিপন্ন হবে। রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন,স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখে কোনো উপকার মিলবে না। মাফিয়া চক্র বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তবে মানুষ এখন বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মাফিয়া চক্রের কবল থেকে বঞ্চিতরা অধিকার চায়। শহিদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার অনেক প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সেটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। কখনোবা সময়সাপেক্ষ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার কাজ করলে সেটি সহজ হয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, স্বৈরাচারের আমলে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি-জায়গা,দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিল। যাদের জায়গা-জমি দখল করেছে তারা দখলদারদের কবল থেকে সেগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়েছে। সেগুলো পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনই রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য সবাইকে স্বেচ্ছাসেবীর মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আসুন আমরা প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাই। একইসাথে আমি সবশেষে জুলাই-আগস্টে শহিদ, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
জেডআরএফ-এর কার্যক্রম প্রসঙ্গে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। জেডআরএফ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে আপনারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছেন-এটি প্রশংসনীয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি জেডআরএফের কার্যক্রমকে আমি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন,‘আজকে স্বাধীন দেশে আমরা আছি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে। নতুন প্রজন্ম রাজনীতি বিমুখ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে ছাত্র-জনতা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়েছেন। আজকে তারাই রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
ড. মঈন খান বলেন, বিএনপির হাল ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছিলেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে দেশের আপামর মানুষের কাছে নিয়ে যান। এই যে ত্যাগের ধারাবাহিকতা সেটি নতুন প্রজন্মকে মনে রাখা উচিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জিয়াউর রহমান মাত্র ৪ বছরে দেশের যে পরিবর্তন এনেছিলেন পরবর্তীতে ৪০ বছরেও অন্যরা আনতে পারেননি। আজকে পরিবেশের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানই তো প্রথম খাল কাটা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। এটিই তো পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি। তিনি নতুন পরিচয় দিয়েছেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। যা একটি ফুলের বাগান। সেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা রয়েছেন। তিনি (শহিদ জিয়া) মনে করতেন, বাংলাদেশের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ। সুতরাং দেশপ্রেমিক সবারই উচিত শহিদ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
ড. মঈন খান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বিএনপি বিশ্বাস করে না। বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জেডআরএফ যার নামে হয়েছে তার কথা বলতে গেলে বলা শেষ হবে না। জেডআরএফ নিরলসভাবে দেশের গরিব-অসহায় মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। আজকে জিয়াউর রহমানের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। তিনি কালুরঘাট বেতারেকন্দ্রে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা ও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জীবনবাজি রেখে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছিলেন। যা দেশবাসীকে আরও বেশি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ উপাধি বীর উত্তম উপাধি লাভ করেন। তিনি উন্নয়ন-উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেন। কোটি কোটি মানুষের জীবন পদ্ধতি পরিবর্তন করে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যান। জেডআরএফ শুধু ২৫ বছর নয়, দুই’শ পঞ্চাশ বছর ধরে জিয়াউর রহমানের কর্মকা- তুলে ধরবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান, রাষ্ট্রদূত এসএম রাশেদ আহমেদসহ নিহত ও আহত পরিবারের কয়েকজন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি ও পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, গোলাম সারওয়ার, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, ড. মো. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আব্দুস সালাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. মো. আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল সোহাগ, ড. আব্দুল করিম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, সাংবাদিক-কবি আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, আতিকুর রহমান রুমন, আমিরুল ইসলাম কাগজী, খুরশীদ আলম,মুরসালিন নোমানী, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুলসহ অনেক ডাক্তার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ছবিরুল ইসলাম হাওলাদারের কুরআন তিলাওয়াতের পর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী।
অনুষ্ঠানে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ১০ জন শহিদের পরিবার এবং ১০ আহতকে সম্মান জানানো হয়। নিহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ডা.পারভেজ রেজা কাকন এবং ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম। আহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ডা. সাজিদ ইমতিয়াজ উদ্দিন।
এর আগে আজ সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জেডআরএফ-এর উদ্যোগে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজানের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জেডআরএফ নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, জেডআরএফের শামীমুর রহমান শামীম, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, ডা. একেএম মাসুদ আখতার জীতুসহ জেডআরএফ-এর সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টও তিনি। জেডআরএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা এনে দেবে সচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা’ স্লোগান নিয়ে গরিব এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে আসছে।