গেনটিং হাইল্যান্ড ,মালয়েশিয়ার তিতিওয়াংসা পর্বতমালার মাউন্ট উলু কালির শিখরে অবস্থিত । যেটা সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৬১১৮ ফুট উঁচু। তবে উপরের পরিবেশ সারা বছরই শীতল।এটি মূলত পাহাং রাজ্যে অবস্থিত । ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার প্রয়াত ব্যবসায়ী লিম গোহ টং এটা প্রতিষ্ঠা করেন ।
যারা মালয়েশিয়া বেড়াতে যান, তাদের সবার প্রথম পছন্দ গেনটিং হাইল্যান্ড। কুয়ালালমপুর শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব। যাওয়ার পথে পুরো সড়ক পথই যেন পর্যটন স্পট। দু’পাশে সুউচ্চ অত্যাধুনিক কারুকাজ সম্বলিত বহুতল ভবন যে কাউকে মুগ্ধ করবে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছালাম। এরপর টিকিট সংগ্রহ করে, সবাই ক্যাবল কারে উঠলাম।
ক্যাবল কার নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত কর্মীরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আগত পর্যটকের সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।
উঁচু-নিচু আঁকা বাঁকা অসংখ্য পাহাড়ি পিচঢালা সড়ক ধরে গাড়ি যতো এগিয়ে যায়, ততোই যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। আশপাশে সবুজ পাহাড়ে অসংখ্য নান্দনিক কারুকাজ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সবুজ পাহাড়-অরণ্যের বুক চিরে যেন বহমান নদীর মতো এঁকে বেঁকে বয়ে চলে গেছে এই সড়ক।
ক্যাবল কার থেকে নিচের সড়ক। এই ক্যাবল কার পাহাড়ের উঁচু থেকে নিচুতে নামে, আবার নিচু প্রান্ত থেকে ওপরে উঠে যায়। কার থেকে উপভোগ করা যায় পাহাড়ের মাথায় মেঘের ভেলার খেলা।
এই কারে চড়লে নিচের দিকে তাকিয়ে অনেকেই ভয় পেতে পারে। কারণ মেঘে ঢাকা পাহাড়ের সবুজ বন তখন কেবল ভৌতিক সিনেমার অন্ধকার জগত মনে হয়। তবে ক্যাবল কারে চড়া খুবই রোমাঞ্চকর।
উঁচু-নিচু পাহাড় আর অরণ্যের বুকে কী সুন্দর পর্যটন নগরী, এমন ঈর্ষার আক্ষেপও ঝরলো অনেকের মুখে। ক্যাবল কারে মেঘের রাজ্য গ্যান্টিং হাইল্যান্ডে মালয়েশিয়ার ১৮ রিঙ্গিতে স্কাইওয়ে ক্যাবল কার ভ্রমণসহ বাসে আসা-যাওয়া।
আগে বলে রাখি যত সময় নিয়েই আপনি ঘুরতে যাবেন, মনে হবে পুরো হাইল্যান্ডটি ঘুরে দেখার জন্য যথেষ্ট নয় । শুরু হলো খোলা আকাশের নিচে তার বেয়ে এগিয়ে চলা। উপরে যাচ্ছি তো যাচ্ছি! পথ আর শেষ হয় না। একেকটি পিলার কত নিচ থেকে ক্যাবলগুলোকে আটকে রেখেছে। প্রায় ৩৮টির মতো পিলার টপকে তখন আমরা ৬১১৮ ফিট উচ্চতায়।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ক্যাবল কার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হলো গেন্টিং হাইল্যান্ডে। সময় গড়িয়ে বিকেল আসতেই মেঘে ঢেকে গেলো পুরো হাইল্যান্ড। পাহাড়কে অতিরিক্ত না কেটে ভিত্তিপ্রস্তর বাড়িয়ে পাঁচতলা পর্যন্ত পার্কিংগুলোর কারণে প্রকৌশলীরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন হোটেল ও পার্ক।
সুউচ্চ ভবনের এই হোটেলগুলোর প্রতিটিতে আছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, শপিং মলসহ নানাবিধ সুবিধা। হোটেল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড, হোটেল রিসোর্ট, হোটেল থিমপার্ক, ম্যাক্সিমসহ আছে বেশ কয়েকটি নামকরা হোটেল। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে কিডস ওয়ার্ল্ড, কফি শপসহ কী নেই এখানে।
আরও আছে শিশুদের খেলার জন্য শত রকমের আইটেম। হাইল্যান্ডের শপিং মলগুলো ঘুরে দেখতে প্রায় দিনের অর্ধেক সময় পার হয়ে যাবে। তবুও দেখার শেষ হবে হবে না।
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক ভিসায় অনেক আগে এসেছে ছোট ভাই সজীব। সজীব ছিল আমার সাথে সবটা সময়। কিছুক্ষণ পর ও আমাকে বলল, আমি ভাবতেও পারিনি এত সুন্দর একটা দিন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। এখানে এসে আমি অভিভূত। আমি যতদিন মালয়েশিয়াতে আছি এত আনন্দ আমি কখনো পাইনি। আসার আগে জানা ছিল না ক্যাবল কারে এতো উপরে উঠবো। যতো উপরে উঠছিলাম, ভয়ও হচ্ছিল আবার রোমাঞ্চিতও হয়েছি। পাহাড়ে এমন চমৎকার পর্যটন স্পট ও ক্যাবল কার লাইন গড়ে তোলা সত্যি দারুণ ব্যাপার।
সর্বোপরি কখনো অঝরবৃষ্টি, কখনো সূর্যের উকি, আবার হঠাৎ মেঘের উঁকি, যেন মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এক দিগন্ত জলরাশি। দেখেই দেহ মন একেবারেই শীতল হয়ে যায়। যেন মালয়েশিয়ার বুকে এক টুকরো স্বর্গ নেমে এসেছে।