উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটি'র সমাবর্তন-২০২৪। ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়া সিটি হাইস্কুলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ২১৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হয় গ্রাজুয়েশন সনদ ও সম্মাননা। কালো গাউন আর মাথায় গ্রাজুয়েশন হ্যাট পরে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সাথে সনদ গ্রহন করেন। সমাবর্তনে প্রধান অতিথি ও কি-নোট স্পিকার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি সভার সদস্য কংগ্রেসম্যান গেরি কোনোলি।
দুপুর না গড়াতেই নব্য গ্রাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সিটি হাইস্কুলের ক্যাম্পাস অঙ্গন। সমাবর্তনে উপস্থিত হন শত শত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ততক্ষণে কালো গাউনের ওপর কেউ লাল ও নীল রঙের ব্যাচেলর'স হুড কেউবা কমলা ও লাল রঙের মাস্টার্স হুড পরে প্রস্তুত হয়ে যান।
দুপুর ২টায় সিটি হাইস্কুলের আলো ঝলমল অডিটরিয়ামে প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের নেতৃত্বে লিডারশিপ প্রোসেশন শেষে অভ্যাগত অতিথি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ও শিক্ষকদের একটি দল মণ্চে অবস্থান নেন। গ্রাজুয়েশন প্যারেড করে কমেন্সমেন্ট হলরুমে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা।
আয়োজনের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। নব্য গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি গুরুত্বারোপ করেন-আমেরিকায় কিভাবে ছাত্রছাত্রীরা খাপ খাইয়ে নেবেন। এসব নিয়ে তিনি কিছু কৌশল ও কাঠামোও তুলে ধরেন বক্তব্যে। শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাকে ডব্লিউইউএসটি থেকে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক বৈশিষ্টাবলী দিয়ে মোকাবেলা করার পরামর্শ দেন আবু বকর হানিপ।
এরপর কি কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউএস কংগ্রেসম্যান গেরি কনোলি। শিক্ষার্থীদের জন্য তার নির্দেশনামূলক বক্তব্যে তিনি প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ও গ্রাজুয়েটদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রযুক্তিজ্ঞান ও দক্ষতাকে ব্যবহার করেই জলবায়ূ পরিবর্তন, অতিমারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার, অপতথ্য ও সাইবার অপরাধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সমাবর্তনের অন্যতম বক্তা ছিলেন ভার্জিনিয়া হাউজ অব ডেলিগেটসের সদস্য ক্যারেন কিজ-গামারা। প্রতিদিনই নতুন কোনো অর্জনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকা এবং কমিউনিটির উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য গ্রাজুয়েটিং শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ডব্লিউইউএসটি'র সিএফও ফারহানা হানিপ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রে তার নিজের চলার পথের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা। ফারহানা বলেন, স্রেফ নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস রাখা আর যে কোনো বাধাকে সুযোগে পরিণত করতে পারলেই মিলবে সফলতা।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন জর্জিয়ার স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, ভার্জিনিয়ার স্টেট সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম, চীনের এইচডিডি গ্রুপের পরিচালক ড. হুসেইন ভূঁইয়া, ফিনটেক ইকো সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এর কর্নধার ড. সাইফুল খন্দকার, ডব্লউইউএসটির বোর্ড সদস্য সিদ্দিক শেখ, ডব্লিউইউএসটি স্কুল অব প্রফেশনালস এর পরিচালক ও বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান ও অ্যাকসেনচুয়েট এর সিইও ও বোর্ড সদস্য নাসিরুল হক। বক্তারা নতুন গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে ন্যয়নিষ্ঠতা, একাগ্রতা ও ধৈর্য্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন।
এবারের ক্লাস অব ২০২৪ এ দুই ভ্যলেডিক্টোরিয়ান শিক্ষার্থী ছিলেন স্কুল অব বিজনেসের কার্লোস ইসরায়েল মোরেন হারনান্দেজ এবং স্কুল অব ইনফরমেশন টেকনোলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে সনদপ্রাপ্ত জেনিফার আফরোজ চৌধুরী। পরে একে একে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির সনদ তুলে দেওয়া হয়। প্রথমে সনদ নেন স্কুল অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ১৫৮ জন শিক্ষার্থী। এরপর সনদ তুলে দেয়া হয় স্কুল অব বিজনেসের ৫৫জন গ্র্যাডুয়েদের হাতে।
সনদ প্রদান শেষে রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে গ্র্যাজুয়েট ঘোষণা করেন ডব্লিউইউএসটির প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক। সবার শেষে সকল গ্র্যাডুয়েটরা জড়ো হন মঞ্চে। বন্দি হন একফ্রেমে। আর তখনই হ্যাট উপড়ে ছুড়ে গ্র্যাডুয়েডটরা উদযাপন করেন সেই মুহুর্তটি।
সনদ বিতরন শেষে অভ্যাগত অতিথিরা যোগ দেন কনভোকেশন ডিনারে। গ্র্যাজুয়েটরা পরিবারের মানুষদের সাথে নানাভাবে ছবি তুলে বিশেষ দিনটিকে স্মৃতিতে তুলে রাখেন। ছবি তুলেছেন প্রিয় শিক্ষকগণদের সাথে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি-আমেরিকান উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি-আমেরিকানের হাতে পরিচালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি ও ব্যবসায়িক প্রশাসনের উপর ব্যাচেলর ও মাস্টার্স কোর্সে বর্তমানে বিশ্বের ১২১ দেশের প্রায় ১৭শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি সাম্প্রতিক সময়ে ভার্জিনিয়ার ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যেমন পরিচিতি পেয়েছে তেমনি স্বীকৃতি পেয়েছে স্টেট সিনেট ও লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির। এমবিএ প্রোগ্রামের জন্য ভার্জিনিয়ার সেরা র্যাংকিংয়ে উঠে এসেছে ডব্লিউইউএসটির নাম।