অবশেষে বন্ধ হলো কথিত ভাইয়া গ্রুপের র্যাগিং। পোলান্ডের পোজনান শহরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের খবর একুশে টেলিভিশনের অনলাইনে প্রকাশের পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন। দ্রুততম সময়ে বিষয়টি মীমাংসা করায় লায়লা হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাঙালি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
পোজনান পলিটেকনিক, পোজনান ইউনিভার্সিটি অফ লাইফ সায়েন্স, পোজনান ইউনিভার্সিটি অফ ইকোনমিক্স বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করে বাংলাদেশের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী। এখান থেকে পড়ালেখা শেষ করে অনেকেই পোল্যান্ডের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। এদের বড় অংশ পোজনান শহরে বিভিন্ন পেশায় ঢুকে পড়ায় সেখানেও বাঙালিদের সুনাম ছড়াতে শুরু করেছে। প্রাক্তন ছাত্র কিংবা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই হওয়ার সুবাদে নতুন ছাত্র ছাত্রীরা তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন বিদেশ বিভুঁইয়ে সহযোগিতা পাবার আশায়। কিন্তু কিছু সংখ্যক কথিত বড়ভাই এই সম্পর্কটাকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেছিল।
সম্প্রতি এক ছাত্রকে র্যাগ দেয়ার ঘটনায় হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এখানকার বাঙালি পাড়া। যাতে দেশের সুনাম নষ্ট হতে বসেছিল এই দূরদেশে। বিষয়টি জানাজানি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন পোলান্ডের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন। বিষয়টি নিয়ে লায়লা হোসেন একাধিকবার কথা বলেছেন একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে। তিনি জানান, ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। উভয় পক্ষকে ডেকে টানা প্রায় ১০ ঘন্টা বৈঠকের পর মীমাংসা এসেছে। ভবিষ্যতে ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা দেখানো কিংবা অপ্রীতিকর কোন ঘটনার জন্ম দেবে না বলে মুচলেকা দিয়েছে। আশাকরি তারা চিন্তা করবে যে-সবার আগে দেশ ও দেশের সুনাম। নিজেদের মান সম্মান অটুট রাখার জন্য অন্তত তারা ভাতৃপ্রতীম সম্পর্ক বজায় রাখবে। র্যাগ তো দূরের কথা-এখন সবাই সবার সাহায্যে এগিয়ে আসার প্রত্যয় নিয়ে পোলান্ডে তারা বসবাস করবে।
উল্লেখ্য, পোলান্ডের পোজনান শহর বেশ ক’বছর ধরেই বাংলাদেশী ছাত্রদের মিলনেমেলায় পরিণত হয়েছে। এলাকার গ্রোসারি থেকে শুরু করে পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলা ভাষা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। এমনকি অনেক ইটালিয়ান কিংবা জার্মান নাগরিকও শখের বশে বাংলা শিখতে আরম্ভ করেছে। সেই শহরে অতি সম্প্রতি তথাকথিত ভাইয়া গ্রুপের উৎপাত শুরু হয়েছিল। তা যেনো আর বাড়তে না পারে তার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
কথিত ঐ সব বড়ভাই নির্ধারণ করে দিচ্ছিল কোন ছাত্র কার সঙ্গে মিশবে। কে কার মেসে থাকবে। কোন ছাত্র কার সঙ্গে বাসা ভাড়া নিবে-এসব। এমনকি তাদের আয়োজন করা খেলাধুলাতেও কে অংশ নেবে কি নেবে না তাও নির্ধারণ করে দিচ্ছিল বড় ভাইয়ের গং। তাদের নির্দেশ না মানলে র্যাগ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ব্যাপারটি পোলান্ডের বাঙালি কমিউনিটি হয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের কানেও পৌঁছে যায়। খবর প্রকাশ হয় একুশে টেলিভিশনে। আর সেটি দেখেই দ্রুত পদক্ষেপ নেন রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন। ইতোমধ্যে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ভূক্তভোগী ছাত্রদের অভিভাবকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে দূতাবাস। আশ্বস্ত করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তার। সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে অপরাপর শিক্ষার্থীকে।
এই মুহূর্তে পোলান্ডের পোজনান হচ্ছে বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত সম্ভনাময় একটি শহর। পড়ালেখা শেষ করে অনেকেই সেখানে ভাল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সবমিলে বাঙালিদের ঘিরে পোজনানে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। তাই প্রতি বছরই এই শহরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। আর সেটি যেনো অব্যাহত থাকে তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পোলান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন এর আগেও যুগান্তকারী বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। বাঙালি কমিউনিটিতে তিনি যেমন সমাদৃত তেমনি সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে পটু। অত্যন্ত দক্ষ এই কুটনীতিক অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে ফিরবেন। কিন্তু তাঁর সুন্দর কিছু কর্ম পোলান্ডের মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।