আমেরিকার নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে প্রথমবারের মতো শতকন্ঠে সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা বরণ করেছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ১৪ এপ্রিল বৈশাখের প্রথম দিন মানবতার মঙ্গল কামনা করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করেছে এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও মুক্তধারা।বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আহবায়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজক এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় লায়লা হাসানের প্রীতি সম্ভাষণের মধ্য দিয়ে। বক্তব্য রাখেন শত কন্ঠে বর্ষবরণের পরিচালক মহিতোষ তালুকদার তাপস ও এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড-এর সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা। সূর্যোদয়ের পর শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে আবহমান বাংলার বহুমাত্রিক সংস্কৃতি তুলে ধরে যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন স্টেটের সাংস্কৃতিক সংগঠন।
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারের এ আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। আমেরিকা বসবাসকারী বাংলাদেশী অভিবাসীরা একসঙ্গে গেয়ে ওঠেন বৈশাখের গান। সংস্কৃতিপ্রেমী শত শত মানুষ জড়ো হন টাইম স্কয়ারে।তারা বরণ করে নেন বাংলা নতুন বছরকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে এ আয়োজনে সামিল হন বাংলাদেশী অভিবাসীরা। নিজেকে ইতিহাসের অংশ করতে প্রত্যেকের মাঝেই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়াস।
১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের আহবায়ক লায়লা হাসান নিজে একক নৃত্য পরিবেশন করেন টাইম স্কয়ারে। তিনি বলেন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালিদের বৃহত্তম প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। এ অনুষ্ঠান বানচাল করতে বহুদিন ধরেই একটি চক্র পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। কিন্তু বাঙালির চেতনা আর বোধের কাছে তা বরাবরই পরাজিত হয়েছে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, টাইম স্কয়ারের শত কন্ঠের বর্ষবরণ আয়োজনটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। প্রবাস জীবনে এত প্রতিকূলতার পরেও বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণ প্রমাণ করে বাংলা ও বাঙালির সার্বজনীনতা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত। প্রতি বছর এভাবেই যেনো বৈশাখ উদযাপিত হয় নিউইয়র্কের মাটিতে তেমন দাবিও রাখেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
এ বছর পয়লা বৈশাখ উদযাপন ব্যাহত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পাকিস্তানীদের সাথে নিয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। সে মামলায় মৌলবাদীরা পরাজিত হওয়ায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বিশেষ গতি পায়। ধর্মান্ধ সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আলোর মশাল জ্বালার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন লায়লা হাসান।
পুরো আয়োজনকে বাঙালি চেতনার বিজয় হিসেবে দেখছেন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড-এর সভাপতি বিশ্বজিত সাহা। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি কখনো ধর্মান্ধতার কাছে হার মানেনি। ১৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই আয়োজন স্থগিত করার মামলা খারিজ করে দেওয়ায় অসংখ্যা মানুষ সংহতি জানিয়ে আগামী বছর আরও সাড়ম্বরে বর্ষবরণ করার ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য, রমনা বটমূলের আদলে ১৫ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় সকাল থেকে শুরু হয়েছে বর্ষবরণের দ্বিতীয় পর্ব। যেখানে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও ঈদ বাজার অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন বলেন, এখন থেকে প্রতিবছর বৈশাখের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষ উদযাপন হবে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে । থাকবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।